কুমিল্লা ধর্মসাগরপাড়: ভেঙ্গে গেছে টাইলস,পানিতে বর্জ্য

চারপাড়ে ওয়াকওয়ের পরিকল্পনা
ইলিয়াছ হোসাইন।।
কুমিল্লার প্রাণ কেন্দ্র ধর্মসাগর। যা নগর উদ্যান নামেও পরিচিত। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশের ১০ নং ওয়ার্ডে এটি অবস্থিত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে হাজার মানুষের সমাগম হয়। পাখির কলকাকলি,জলের ঢেউ,বাতাসে আঁকা সবুজ পাতার রঙ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে! নিয়মিত ব্যায়াম এবং দূর-দূরান্ত থেকে বেড়াতে আসেন বহুমানুষ।
বর্তমানে পার্কের ফুটপাথের বহু অংশে টাইলসগুলো ভেঙে গর্তে রূপ নিয়েছে। যার ফলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। পর্যটক,দোকানদার এবং মাছ শিকারিদের ফেলা প্লাস্টিক-বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সাগরের পানি ও পরিবেশ;তা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এদিকে ল্যাম্পপোস্টের খুঁটিগুলো থাকলেও লাইট নেই। কিছু কিছু খুঁটি ভেঙেও ফেলা হয়েছে। এদিকে সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, ধর্মসাগরের চারপাড়ে ওয়াকওয়ে হতে যাচ্ছে। যেটির ব্যয় প্রায় ২২কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্যানের ছোট বড় সাতটি প্রবেশগেইট আছে। হাঁটার পথ লাল মাটির টাইলসে মোড়ানো। সাগরের পাড়ে বসে বিশ্রাম এবং আড্ডা দিতে উত্তর থেকে দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত রয়েছে ইটের তৈরি দীর্ঘ আসন। চিকচিক জলে রাতের সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য রয়েছে বাহারি রঙের লাইট ও ল্যাম্পপোস্ট। কিন্তু খুঁটিগুলো থাকলেও লাইটগুলো নেই। কিছু কিছু খুঁটি ভেঙেও ফেলা হয়েছে। পার্কটির পূর্বপাশে অবস্থিত শিশু পার্ক। রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য বহু রাইড। ভেতরে ক্যান্টিন থাকলেও তা চালু নেই। ক্যান্টিনের এক কোনে ভাঙ্গাচুরা জিমনেশিয়াম। কিন্তু সেখানে নেই ব্যায়ামের যথেষ্ট সরঞ্জাম। পার্কের অনেক দোলনাও নষ্ট হয়ে ঝুলে আছে। পার্কের উত্তর দিকে আছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও অযুখানা। এছাড়াও এর ভেতরে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন অঙ্কনশালা,পথশিশুদের শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক টয়লেট।
নিয়মতি ব্যায়াম করতে আসা শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.এম ছাত্তার বলেন, আমি ধর্মসাগরপাড় নিয়মিত আসি। সকাল সময়টা খুব ভালো লাগে,ভালো কাটে,সারাদিন চাঙা থাকি। এখানে অনেক সামাজিক সংগঠন মিলেমিশে শরীরচর্চা করে। বাগান,গাছগাছালি মিলিয়ে এখানে পরিবেশ অনেক মনোরম। ধর্মসাগর সুন্দর,এটাকে আরো সুন্দর করা যায়। এখানে ছোট একটি জিমনেশিয়াম আছে, যার সরঞ্জাম অপ্রতুল। পার্কে একটা বড় জিমনেসিয়াম প্রয়োজন।
ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুবায়দা নূর খান বলেন, হাঁটার জন্যে আমাদের এ পৌর উদ্যান খুবই যুগপোযোগী। এটি অনেক গাছগাছালিতে ভরা। এখানে বসলে ক্লান্তি দূর হয়। তবে আমরা যে ফুটপাতে হাঁটছি দেখা গেছে কিছু কিছু অংশে টাইলস খুলে গিয়েছে। যেখানে কেউ পড়ে আঘাত পাবে; অনেকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বেঞ্চগুলো দেখা যায় খুব নোংরা হয়ে থাকে। দোকান পাট থাকবে । তবে ক্রেতাদের এ ব্যাপারে বেশ সচেতন থাকা উচিত। আমাদের নিজেদেরকে পরিবর্তন হতে হবে। যারা ঘুরতে আসি আমরা আমাদের পার্কটাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
সংগঠক মঞ্জরুল আজীম পলাশ বলেন,ধর্মসাগর আমাদের প্রাণ। কুমিল্লার ফুসফুস। শৈশবের অস্তিত্ব আমরা এখানে খুঁজে পাই। সে কারণে এর পরিবেশ বিপর্যয় দেখলে খুবই ব্যথিত হই। দেখা যায় কিছুদিন পর পর প্রচুর প্লাস্টিকে সাগরের পানি ছেয়ে যায়। বিকেলে হকারদের দখলে থাকে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও নেই। চারদিক থেকে বহু মানুষ এখানে আসে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। পার্কটিকে যেনো আরো সুন্দর করার পরিকল্পনা তারা নেয়।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মঞ্জুর কাদের মনি জানান,ধর্মসাগরের চারপাড়ে দারুণ একটা ওয়াকওয়ে হতে যাচ্ছে। যেটির ব্যয় প্রায় ২২কোটি টাকা। আশা করা যায় এটা হাতিরঝিল থেকেও বেশ সুন্দর হবে। আর পার্কে এমন কিছু গাছ লাগানো হবে যে গাছে পাখি বসে। আমাদের বর্তমান মেয়র তাসিন বাহার সূচনা মহোদয় তিনি পার্ককে আরো সুন্দর করতে অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। পার্কের পরিবেশ, সাগরের পানি থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্কাশন করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যে আমরা সর্বদা চেষ্টা করি। গত দু’মাসে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই নতুন মেয়র কুমিল্লা সিটির সৌন্দর্য্য বর্ধনে কাজ শুরু করেছেন। ইনশাআল্লাহ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সিটি কর্পোরেশন হিসেবে আমরা এগিয়ে নেবো।