পানি সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত

(প্রথম পর্ব)
——————— মতিন সৈকত
তিন দশকের বেশি সময় যাবত নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়, পরিবেশ প্রকৃতি, জলবায়ু নিয়ে কাজ করছি। নদ-নদী সম্পর্কে আমার জানার অদম্য আগ্রহ এবং কৌতুহল রয়েছে। পবিত্র কুরআনুল কারিম অর্থসহ অধ্যায়ন করতে গিয়ে দেখি জান্নাত সম্পর্কে যতগুলো আয়াত আছে তার অধিকাংশ আয়াতে জান্নাতের পাদদেশে প্রবহমান নদী সম্পর্কে বলা হয়েছে। এছাড়াও নদ-নদী, ঝর্ণাধারা, প্রস্রবণ, বারিপাত,বারিমন্ডল, বায়ু, মেঘমালা, বৃষ্টিধারা, বিদ্যুৎ চমকানো, বজ্রপাত, সাগর-মহাসাগর, নৌযান, জাহাজ, প্রবহমান জলধারা, জলবায়ু সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নাযিল করেছেন। বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে তরু, লতা, গাছ-গাছালিতে পৃথিবী পরিপূর্ণ করেছেন। রিজিকের ব্যাবস্থা করেছেন। শস্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন। পরিবেশ সুশীতল এবং ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন। নিয়ামতে পরিপূর্ণ করেছেন। নদীর তলদেশে মহান রাব্বুল আলামিন আরেক জগৎ সৃষ্টি করেছেন যা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান শূন্যের কোটায়। কুরআন আমরা তরজমাসহ যত পড়ব তত জানব। জ্ঞানের উৎস কুরআন। হিদায়েতর অমিয়বাণী কুরআন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে জীবনে মরণে ঈমানের উপর কায়েম রাখুক। কুরআনের আলোয় উদ্ভাসিত করুক।
নদী সম্পর্কিত আয়াতগুলো প্রথমদিকে সংকলনের। কুরআনুল কারিম অধ্যায়নের সাথে দেখি আল্লাহর সৃষ্টির বহু বৈচিত্র্যময় সাদৃশ্যপূর্ণ অপূর্ব মিল। নদী, পানি,বায়ু, মেঘমালা, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, নৌযান, সমুদ্র সম্পর্কিত আয়াতগুলো খুঁজে সংকলন করার চেষ্টা করি। এ সুযোগে কুরআনের সাথে আরো নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আল্লাহ যেন কুরআন বুঝে পড়ার এবং আমল করার তাওফিক দান করেন।
অজ্ঞতা, অসাবধানতা বশত অনেক আয়াত ছুটে যেতে পারে। সে জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। পরবর্তীতে নজরে আসলে বা কেউ ধরিয়ে দিলে সংশোধন করে নেব ইনশাআল্লাহ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত এবং সম্পাদিত ‘আল-কুরআনুল কারীম’ সপ্তম মূদ্রণের দ্বিতীয় সংস্করণ
থেকে হুবহুব বাংলা অনুবাদ গ্রহণ করেছি। উপরোক্ত শিরোনামে প্রত্যক্ষভাবে ৩০১টি আয়াত খুঁজে পেয়েছি। পরোক্ষোভাবে আরো আয়াত আছে।
সুরা বাকারা’র ১৯, ২০,২২, ২৫ , ৫০, ৫৭, ৬০, ১৬৪, ২১০, ২৪৯, ২৬৪,২৬৫,২৬৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,(১৯)কিংবা যেমন আকাশের বর্ঘণমুখর মেঘ, যাহাতে রহিয়াছে ঘোর অন্ধকার, বজ্রধাবনি ও বিদ্যুৎ-চমক। বজ্রধ্বনিতে মৃত্যুভয়ে তাহারা তাহাদের কর্ণে অঙ্গুলি প্রবেশ করায়। আল্লাহ কাফিরদিগকে পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছেন।”
(২০) বিদ্যুৎ-চমক তাহাদের দৃষ্টিশক্তি প্রায় কাড়িয়া লয়। যখনই বিদ্যুৎতালোকে তাহাদের সম্মুখে উদ্ভাসিত হয় তাহারা তখনই পথ চলিতে থাকে এবং যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় তখন তাহারা থমকিয়া দাঁড়ায়। আল্লাহ ইচ্ছে করিলে তাহাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি হরণ করিতেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
(২২) যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ করিয়াছেন এবং আকাশ হইতে পানি বর্ষণ করিয়া তদ্দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জানিয়া শুনিয়া কাহাকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করাইও না।
(২৫) যাহারা ঈমান আননয়ন করে ও সৎকর্ম করে তাহাদিগকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাহাদের জন্য রহিয়াছে জান্নাত, যাহার নি¤œদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাহাদিগকে ফল-মূল খাইতে দেওয়া হইবে তখনই তাহারা বলিবে, ‘ আমাদিগকে পূর্বে জীবিকারূপে যাহা দেওয়া হইত ইহা তো তাহাই, তাহাদিগকে অনুরূপ ফলই দেওয়া হইবে এবং সেখানে তাহাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী রহিয়াছে, তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে।
(৫০) যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিধা-বিভক্ত করিয়াছিলাম এবং তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিলাম ও ফিরআওনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করিয়াছিল আর তোমরা উহা প্রত্যক্ষ করিতেছিলে।
(৫৭) আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করিলাম, তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করিলাম। বলিয়াছিলাম ‘ তোমাদিগকে ভাল যাহা দান করিয়াছি তাহা হইতে আহার কর।’ তাহারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই, বরং তাহারা তাহাদের প্রতিই জুলুম করিয়াছিল।
(৬০) স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করিল, আমি বলিলাম, “তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর। ফলে উহা হইতে দ্বাদশ প্রস্রবণ প্রবাহিত হইল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান চিনিয়া লইল। বলিলাম “আল্লাহ প্রদত্ত জীবীকা হইতে তোমরা পানাহার কর এবং দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করিয়া বেড়াইও না।
(১৬৪) আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে, যাহা মানুষের হিত সাধন করে তাহা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ আকাশ হইতে যে বারিবর্ষণ দ্বারা ধরিত্রীকে তাহার মৃত্যুর পর পূনরুজ্জীবিত করেন তাহাতে এবং তাহার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে বায়ুর দিক পরিবর্তনে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রহিয়াছে।
(২১০) তাহারা শুধু ইহার প্রতীক্ষায় রহিয়াছে যে, আল্লাহ ও ফিরিশতাগণ মেঘের ছায়ায় তাহাদের নিকট উপস্থিত হইবেন, তৎপর সব কিছুর মীমাংসা হইয়া যাইবে। সমস্ত বিষয় আল্লাহহরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে।”
(২৪৯) অতঃপর তালুত যখন সৈন্যবাহিনীসহ বাহির হইল সে তখন বলবল, ‘ আল্লাহ এক নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করিবেন। যে কেহ উহা হইতে পান করিবে সে আমার দলভুক্ত নহে, আর যে-কেহ উহার স্বাদ -গ্রহণ করিবে না সে আমার দলভুক্ত, ইহা ছাড়া যে-কেহ তাহার হস্তে এক কোষ পানি গ্রহণ করিবে সে-ও। ‘ অতঃপর অল্প সংখ্যক ব্যাতীত তাহারা উহা হইতে পান করিল। সে এবং তাহার সংগী ঈমানদারগণ যখন উহা অতিক্রম করিল তখন তাহারা বলিল, ‘ জালুত ও তাহার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত শক্তি আজ আমাদের নাই, কিন্তু যাহাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সহিত তাহাদের সাক্ষাৎ ঘটিবে তাহারা বলিল, ‘ আল্লাহ হুকুমে কত ক্ষুদ্রদল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করিয়াছে!’ আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সহিত রহিয়াছেন।
(২৬৪) হে মুমিনগণ! দানের কথা প্রচার করিয়া এবং ক্লেশ দিয়া তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিস্ফলা করিওনা যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করিয়া থাকে, এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না। তাহার উপমা একটি মসৃণ পাথর যাহার উপর কিছু মাটি থাকে, অতঃপর তাহার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাহাকে পরিস্কার করিয়া রাখিয়া দেয়। যাহা তাহারা উপার্জন করিয়াছে তাহার কিছুই তাহারা তাহাদের কাজে লাগাইতে পারিবে না। আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
(২৬৫) যাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভার্থে ও নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করণার্থে ধনৈশ্বর্য ব্যয় করে তাহাদের উপমা কোন উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যাহাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে তাহার ফলমূল দ্বিগুণ জন্মে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি না-ও হয় তবে লঘু বৃষ্টিই যথেষ্ট। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
(২৬৬) তোমাদের কেহ কি চায় যে, তাহার খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান থাকে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং যাহাতে সর্ব প্রকার ফলমূল আছে, যখন সে ব্যাক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয়, এবং তাহার সন্তান-সন্তুতি দুর্বল, অতঃপর উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় ও উহা জ্বলিয়া যায়? এইভাবে আল্লাহ তাঁহার নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করেন যাহাতে তোমারা অনুধাবন করিতে পার।
সুরা আল ইমরানের ১৩৬, ১৯৫, ১৯৮, আল্লাহ বলেন,(১৩৬) উহারাই তাহারা, যাহাদের পুরস্কার তাহাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত উত্তম।
(১৯৫) অতঃপর তাহাদের প্রতিপালক তাহাদের ডাকে সাড়া দিয়া বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কোন কর্মে নিষ্ঠ নর অথবা নরীর কর্ম বিফল করি না, তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যাহারা হিজরত করিয়াছে, নিজ গৃহ হইতে উৎখাত হইয়াছে, আমার পথে নির্যাতিত হইয়াছে এবং যুদ্ধ করিয়াছে ও নিহত হইয়াছে আমি তাহাদের মন্দ কার্যগুলি অবশ্যই দূরীভূত করিব এবং অবশ্যই তাহাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ইহা আল্লাহর নিকট হইতে পুরস্কার, উত্তম পুরস্কার আল্লাহরই নিকট।
(১৯৮) কিন্তু যাহারা তাহাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাহাদের জন্য রহিয়াছে জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে। ইহা আল্লাহর পক্ষ হইতে আতিথ্য, আল্লাহর নিকট যাহা আছে তাহা সৎকর্ম পারায়ণদিগের জন্য শ্রেয়।
সুরা নিসা’র ১৩, ৫৭, ১২২, আয়াতে আল্লাহ বলেন,(১৩) এই সব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। কেহ আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করিলে আল্লাহ তাহাকে দাখিল করিবেন জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং ইহা মহাসাফল্য।
(৫৭) যাহারা ঈমান আনয়ন করে ও ভালো কাজ করে তাহাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা চিরস্থায়ী হইবে, সেখানে তাহাদের জন্য পবিত্র সংগী থাকিবে এবং তাহাদিগকে চির স্নিগ্ধ ছায়ায় দাখিল করিব।
(১২২) এবং যাহারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকাজ করে তাহাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা চিরস্থায়ী হইবে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী।
সুরা মায়িদার ১২, ৮৫, ১১৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,(১২) আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং তাহাদের মধ্য হইতে দ্বাদশ নেতা নিযুক্ত করিয়াছিলাম আর আল্লাহ বলিয়াছিলেন ‘ আমি তোমাদের সংগে আছি, তোমরা যদি সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলগণে ঈমান আন ও ইহাদিগকে সম্মান কর, এবং আল্লাহকে উত্তম ঝণ প্রদান কর তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করিব এবং নিশ্চয় তোমাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, ইহার পরও কেহ কুফরী করিলে সে সরল পথ হারাইবে।
(৮৫) এবং তাহাদের এই কথার জন্য আল্লাহ তাহাদের পুরস্কার নিদিষ্ট করিয়াছেন জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে। ইহা সৎকর্মপরায়ণদিগের পুরস্কার।
(১১৯) আল্লাহ বলিবেন, এই সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণ তাহাদিগের সত্যতার জন্য উপকৃত হইবে, তাহাদের জন্য আছে জান্নাত যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তাহারা সেখানে চিরস্থায়ী হইবে, আল্লাহ তাহাদিগের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারাও তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট, ইহা মহাসফলতা।
সুরা আন’আমের ৬, ৯৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,(৬) তাহারা কি দেখে না যে, তাহাদিগের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি, তাহাদিগকে দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যেমনটি তোমাদিগকেও করি নাই এবং তাহাদিগের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম আর তাহাদিগের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করিয়াছিলাম, অতঃপর তাহাদিগের পাপের দরুন তাহাদিগকে বিনাশ করিয়াছি এবং তাহাদিগের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়াছি।
(৯৯) তিনিই আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর উহা দ্বারা আমি সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদগমন করি,অনন্তর উহা হইতে সবুজ পাতা উদগত করি, পরে উহা হইতে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্য-দানা উৎপাদন করি, এবং খেজুর বৃক্ষের মাথি হইতে ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি আর আংগুরের উদ্যান সৃষ্টি করি এবং যায়তুন ও দাড়িম্বর, ইহারা একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশও, লক্ষ্য কর, উহার ফলের প্রতি যখন উহা ফলবান হয় এবং উহার পরিপক্বতা প্রাপ্তির প্রতি। মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য উহাতে অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে।
সুরা আরা’ফের ৪৩, ৫৭, ৬৪, ৮৪, ১৩৩, ১৩৬, ১৩৮, ১৬০, ১৬৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,(৪৩) তাহাদিগের অন্তর হইতে ঈর্ষা দূর করিব, তাহাদিগের পাদদেশে প্রবাহিত হইবে নদী এবং তাহারা বলিবে ‘ প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদিগকে ইহার পথ দেখাইয়াছেন। আল্লাহ আমাদিগকে পথ না দেখাইলে আমরা কখনও পথ পাইতাম না। আমাদিগের প্রতিপালকের রাসুলগণ তো সত্য বাণী আনিয়াছিল , এবং তাহাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলা হইবে, ‘ তোমারা যাহা করিতে তাহারই জন্য তোমাদিগকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হইয়াছে।
(৫৭) তিনিই স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন উহাকে ঘন মেঘ বহন করে তখন উহা নির্জীব ভূখ-ের দিকে চালনা করি পরে উহা হইতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তৎপর উহার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। এইভাবে মৃতকে জীবিত করি যাহাতে তোমরা শিক্ষা লাভ কর।
(৬৪) অতঃপর তাহারা তাহাকে মিথ্যাবাদী বলে। তাহাকে ও তাহার সংগে যাহারা তরণীতে ছিল আমি তাহাদিগকে উদ্ধার করি, এবং যাহারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখান করিয়াছিল তাহাদিগকে নিমজ্জিত করি। তাহারা ছিল এক অন্ধ সম্প্রাদায়।
(৮৪) তাহাদিগের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম, সুতরাং অপরাধীদিগের পরিণাম কী হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর।
(১৩৩) অতঃপর আমি তাহাদিগকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ভেক ও রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি। এইগুলি স্পষ্ট নিদর্শন, কিন্তু তাহারা দাম্ভিকই রহিয়া গেল, আর তাহারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়।
(১৩৬) সুতরাং আমি তাহাদিগকে শাস্তি দিয়াছি এবং তাহাদিগকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করিয়াছি, কারণ তাহারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করিত এবং এই সম্বন্ধে তাহারা ছিল গাফিল।
(১৩৮) এবং বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করাইয়া দেই, অতঃপর তাহারা প্রতীমা পূজায় রত এক জাতির নিকট উপস্থিত হয়। তাহারা বলিল ‘হে মুসা! তাহাদিগের দেবতার ন্যায় আমাদিগের জন্যও এক দেবতা গড়িয়া দাও, সে বলিল, ‘ তোমরা এক মুর্খ সম্প্রদায়।
(১৬০) তাহাদিগকে আমি দ্বাদশ গোত্রে তথা দলে বিভক্ত করিয়াছি। মুসার সম্প্রদায় যখন তাহার নিকট পানি প্রার্থনা করিল, তখন তাহার প্রতি প্রত্যাদেশ করিলাম, ‘ তোমার লাঠির দ্বারা পাথরে আঘাত কর, ফলে উহা হইতে দ্বাদশ প্রস্রবণ উৎসারিত হইল, প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানস্থান চিনিয়া লইল, এবং মেঘদ্বারা তাহাদিগের উপর ছায়া বিস্তার করিয়া ছিলাম, তাহাদিগের নিকট মান্না ও সালওয়া পাঠাইয়াছিলাম এবং বলিয়াছিলাম, ‘ভাল যাহা তোমাদিগকে দিয়াছি তাহা আহার কর। ‘ তাহারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই কিন্তু তাহারা নিজদিগের প্রতিই জুলুম করিতেছিল।
(১৬৩) তাহাদিগকে সমুদ্রতীরবর্তী জনপদবাসী দিগের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা শনিবারে সীমালংঘন করিত, শনিবার উদযাপনের দিন মাছ পানিতে ভাসিয়া তাহাদিগের নিকট আসিত, কিন্তু যেদিন তাহারা শনিবার উদযাপন করিত না সেদিন উহারা তাহাদিগের নিকট আসিত না, এইভাবে তাহাদিগকে পরীক্ষা করিয়াছিলাম, যেহেতু তাহারা সত্যত্যাগ করিত।
সুরা আনফালের ১১ আয়াতে আল্লাহ বলেন ” স্মরণ কর, তিনি তাঁহার পক্ষ হইতে স্বস্তির জন্য তোমাদিগকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ হইতে তোমাদিগের উপর বারি বর্ষণ করেন উহা দ্বারা তোমাদিগকে পবিত্র করিবার জন্য, তোমাদিগ হইতে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য, তোমাদিগের হৃদয় দৃঢ় করিবার জন্য এবং তোমাদিগের পা স্থির রাখিবার জন্য।
সুরা তাওবার ১৯, ৭২, ৮৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন”
(১৯) যাহারা হাজীদিগের পানি সরবরাহ করে এবং মসজিদুল -হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করে, তোমরা কি তাহাদিগকে উহাদিগের সমজ্ঞান কর, যাহারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান আনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? আল্লাহর নিকট উহারা সমতুল্য নহে। আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎ পথ প্রদর্শন করেন না।”
(৭২) ” আল্লাহ মু’মিন নর ও নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন জান্নাতের-যাহার নিন্মদেশে নদী প্রবাহিত যেথায় তাহারা স্থায়ী হইবে, – এবং স্থায়ী জান্নাতে উত্তম বাসস্থানের। আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উহাই মহাসাফল্য।”
(৮৯) ” আল্লাহ উহাদিগের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন জান্নাত, যাহার নিন্মদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তাহারা স্থায়ী হইবে, ইহাই মহা-সাফল্য।
সূরা য়ূনুসের ৯, ২২, ২৪, ৭৩, ৯০ আয়াতে আল্লাহ বলেন (৯)” যাহারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ন তাহাদিগের প্রতিপালক তাহাদিগের ঈমান হেতু তাহাদিগকে পথ নির্দেশ করিবেন, সুখদ কাননে তাহাদিগের পাদদেশে নদী প্রবাহিত হইবে।
(২২) ” তিনিই তোমাদিগকে জলে -স্থলে ভ্রমণ করান এবং তোমরা যখন নৌকারোহী হও এবং এগুলো আরোহী লইয়া অনুকূল বাতাসে বহিয়া যায় এবং তাহারা উহাতে আনন্দিত হয়, অতঃপর এইগুলি বাত্যাহত এবং সর্বদিক হইতে তরংগাহত হয় এবং তাহারা উহা দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া পড়িয়াছে মনে করে, তখন তাহারা আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হইয়া আল্লাহকে ডাকিয়া বলেঃ তুমি আমাদিগকে ইহা হইতে ত্রাণ করিলে আমরা অবশ্য কৃতজ্ঞদিগের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
(২৪) ” পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত যেমন আমি আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করি যদ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হইয়া উদগত হয়, যাহা হইতে মানুষ ও জীব-জন্তু আহার করিয়া থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তাহার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং উহার আধিকারিগণ মনে করে উহা তাহাদিগের আয়াত্তাধীন, তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ আসিয়া পড়ে ও আমি উহা এমনভাবে নির্মূল করিয়া দিই, যেন ইতিপূর্বে উহার অস্তিত্বই ছিল না। এইভাবে আমি নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
(৭৩) আর উহারা তাহাকে মিথ্যাবাদী বলে, অতঃপর তাহাকে ও তাহার সংগে যাহারা তরণীতে ছিল তাহাদিগকে আমি উদ্ধার করি এবং তাহাদিগকে স্থলাভিষিক্ত করি ও যাহারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখান করেছিল তাহাদিগকে নিমজ্জিত করি। সুতরাং দেখ, যাহাদিগকে সতর্ক করা হইয়াছিল তাহাদিগের পরিণাম কী হইয়াছে?
(৯০) আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করাইলাম এবং ফির’আওন ও তাহার সৈন্যবাহীনি বিদ্বেষ পরবশ হইয়া ও ন্যায়ের সীমা লংঘন করিয়া তাহাদিগের পশ্চাতধাবন করিল। পরিশেষে যখন সে নিমজ্জমান হইল তখন সে বলিল, আমি বিশ্বাস করিলাম বনী ইসরাঈল যাঁহাতে বিশ্বাস করে -তিনি ব্যাতীত অন্য কোন ইলাহ নাই এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদিগের অন্তর্ভুক্ত।

সুরা হুদের ৩৭, ৩৮, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৫২ আয়াতে আল্লাহ বলেন।
(৩৭) তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ কর এবং যাহারা সীমা লঙ্ঘন করিয়াছে তাহাদিগের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলিও না তাহারা তো নিমজ্জিত হইবে।
(৩৮) সে নৌকা নির্মাণ করিতে লাগিল এবং যখনই তাহার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা তাহার নিকট দিয়া যাইত, তাহাকে উপহাস করিত, সে বলিত তোমরা যদি আমাকে উপহাস কর তবে আমরাও তোমাদিগকে উপহাস করিব যেমন তোমরা উপহাস করিতেছ।
(৪০) অবশেষে যখন আমার আদেশ আসিল এবং উনান উথলিয়া উঠিল আমি বলিলাম, ‘ইহাতে উঠাইয়া লও প্রত্যেক শ্রেণীর যুগল, যাহাদিগের বিরুদ্ধে পূর্ব -সিদ্ধান্ত হইয়াছে, তাহারা ব্যতীত তোমার পরিবার-পরিজনকে এবং যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদিগকে’। তাহার সঙ্গে ঈমান আনিয়াছিল অল্প কয়েকজন।
(৪১) সে বলিল ‘ইহাতে আরোহণ কর, আল্লাহর নামে ইহার গতি ও স্থিতি, আমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
(৪২) পর্বত-প্রমাণ তরঙ্গ মধ্যে ইহা তাহাদিগকে লইয়া বহিয়া চলিল, নূহ তাহার পুত্র, যে উহাদিগের হইতে পৃথক ছিল, তাহাকে আহবান করিয়া বলিল, ‘হে আমার পুত্র! আমাদিগের সঙ্গে আরোহণ কর এবং কাফিরদিগের সঙ্গী হইও না।’
(৪৩) সে বলিল ‘ আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় লইব যাহা আমাকে প্লাবন হইতে রক্ষা করিবে’। সে বলিল ‘ আজ আল্লাহর বিধান হইতে রক্ষা করিবার কেহ নাই, যাহাকে আল্লাহ দয়া করিবেন, সে ব্যাতীত।’ ইহার পর তরঙ্গ উহাদিগকে বিছিন্ন করিয়া দিল এবং সে নিমজ্জিতদিগের অন্তর্ভুক্ত হইল।
(৪৪) ইহার পর বলা হইল ‘ হে পৃথিবী! তুমি তোমার পানি গ্রাস করিয়া লও এবং হে আকাশ! ক্ষান্ত হও।’ ইহার পর বন্য প্রশমিত হইল এবং কার্য সমাপ্ত হইল, নৌকা জুদী পর্বতের উপর স্থির হইল এবং বলা হইল, জালিম সম্প্রদায় ধ্বংস হইক।
(৫২) হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদিগের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁহার দিকেই ফিরিয়া আস। তিনি তোমাদিগের জন্য প্রচুর বারি বর্ষাইবেন। তিনি তোমাদিগকে আরও শক্তি দিয়া তোমাদিগের শক্তি বৃদ্ধি করিবেন এবং তোমরা অপরাধী হইয়া মুখ ফিরাইয়া লইও না।’
সুরা য়ূসুফের ১০, ১৫, ১৯, ৪৯ আয়াতে আল্লাহ
বলেন ”
(১০) উহাদিগের মধ্যে একজন বলিল, য়ূসুফকে হত্যা করিও না এবং তোমরা যদি কিছু করিতেই চাহ তাহাকে কোন গভীর কূপে নিক্ষেপ কর, যাত্রীদলের কেহ তাহাকে তুলিয়া লইয়া যাইবে।
(১৫) অতঃপর উহারা যখন তাহাকে লইয়া গেল এবং তাহাকে গভীর কূপে নিক্ষেপ করিতে একমত হইল, এমতাবস্থায় আমি তাহাকে জানাইয়া দিলাম, ‘ তুমি ইহাদিগকে উহাদিগের এই কর্মের কথা অবশ্যই বলিয়া দিবে যখন উহারা তোমাকে চিনিবে না।
(১৯) এক যাত্রীদল আসিল, উহারা উহাদিগের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করিল, সে তাহার পানির ডোল নামাইয়া দিল। সে বলিয়া উঠল, ‘ কি সুখবর! এ যে এক কিশোর! অতঃপর উহারা তাহাকে পণ্যরূপে লুকাইয়া রাখিল, উহারা যাহা করিতেছিল সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত ছিলেন।
(৪৯) ‘ এবং ইহার পর আসিবে এক বৎসর, সেই বৎসর মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হইবে এবং সেই বৎসর মানুষ প্রচুর ফলের রস নিংড়াইবে।’
সূরা রা’দের ৩, ৪, ১২, ১৩,১৪ ১৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন
(৩) তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করিয়াছেন এবং উহাতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করিয়াছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। ইহাতে অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
(৪) পৃথিবীতে রহিয়াছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখণ্ড, উহাতে আছে দ্রাক্ষা-কানন, শস্য -ক্ষেত্র, একাধিক শিরবিশিষ্ট অথবা এক শিরবিশিষ্ট খর্জূর-বৃক্ষ সিঞ্চিত একই পানিতে এবং ফল হিসাবে উহাদিগের কতককে কতকের উপর আমি শ্রেষ্ঠত্ত দিয়া থাকি। অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে রহিয়াছে নিদর্শন।
(১২) তিনিই তোমাদিগকে দেখান বিজলী যাহা ভয় ও ভরসা সঞ্চার করে এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ঘন মেঘ।
(১৩)” বজ্র নির্ঘোষ ও ফিরিশতাগণ সভয়ে তাঁহার সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তিনি বজ্রপাত করেন। এবং যাহাকে ইচ্ছা উহা দ্বারা আঘাত করেন, তথাপি উহারা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে, যদিও তিনি মহাশক্তিশালী।
(১৪) সত্যের আহবান তাঁহারই যাহারা তাঁহাকে ব্যতীত আহবান করে অপরকে, তাহাদিগকে কোনই সাড়া দেয় না উহারা, তাহাদিগের দৃষ্টান্ত সেই ব্যত্তির মত, যে তাহার মুখে পানি পৌঁছিবে এ আশায় তাহার হস্তদ্বয় প্রসারিত করে এমন পানির দিকে যাহা তাহার মুখে পৌছিবার নহে কাফিরদিগের আহবান নিস্ফল।
(১৭) তিনি আকাশ হইতে বৃষ্টিপাত করেন, ফলে উপত্যকা সমূহ উহাদিগের পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হয় এবং প্লাবন তাহার উপরিস্থিত আবর্জনা বহন করে, এইরূপে আবর্জনা উপরিভাগের আসে যখন অলংকার অথবা তৈজসপত্র নির্মাণ উদ্দেশ্যে কিছু অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হয়। এইভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দিয়া থাকেন। যাহা আবর্জনা তাহা ফেলিয়া দেওয়া হয় এবং যাহা মানুষের উপকারে আসে তাহা জমিতে থাকিয়া যায়। এইভাবে আল্লাহ উপমা দিয়া থাকেন।
(৩৫) মুত্তাকীদিগকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে, তাহার উপমা এইরূপঃ উহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, উহার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী। যাহারা মুত্তাকী ইহা তাহাদিগের কর্মফল এবং কাফিরদিগের কর্মফল অগ্নি।
সুরা ইব্রাহিমের ২৩, ৩২, আয়াতে আল্লাহ বলেন
(২৩) যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহাদিগকে দাখিল করা হইবে জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তাহারা স্থায়ী হইবে তাহাদিগের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে, সেথায় তাহাদিগের অভিবাদন হইবে ‘সালাম’।
(৩২) তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন, যিনি আকাশ হইতে পানি বর্ষণ করিয়া তদ্দ্বারা তোমাদিগের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন, যিনি নৌযানকে তোমাদিগের অধীন করিয়া দিয়েছেন যাহাতে তাঁহার বিধানে উহা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদিগের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন নদী সমূহকে।
চলমান————-
(লেখক, সহকারী অধ্যাপক। চারবার জাতীয় পদক প্রাপ্ত এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন এআইপি)