ব্যবসায়ী শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তামুক্ত কুবির প্রত্যাশা

১৮ বছর বয়সী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

inside post

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। কুমিল্লা নগরীর মূলকেন্দ্র থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে। এটি লালমাই পাহাড়ের কোল সালমানপুরে অবস্থিত। ১৮ বছর বয়সী বিশ^বিদ্যালয়টি তারুণ্যে টগবগ করার কথা থাকলেও এখনো সেটি হাঁটা শিখছে বলে শিক্ষাবিদদের মন্তব্য। তারা বলেন,ব্যবসায়ী শিক্ষক আর রাজনৈতিক নেতা কর্মকর্তা মুক্ত হলে কুবি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।
কুবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাচীন পাল আমল থেকে কুমিল্লা হচ্ছে শিক্ষা নগরী। কুমিল্লা কোটবাড়িতে শালবন বিহার ছাড়াও রয়েছে ৫২টি প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা, যা শিক্ষাক্ষেত্রে কুমিল্লার সমৃদ্ধ ইতিহাসকে তুলে ধরেছে। শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরসংলগ্ন সালমানপুরের ৫০ একর ভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। লালমাটির ক্যাম্পাসে ২০০৭ সালের ২৮ মে কুবির যাত্রা। ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে কুবির যাত্রা শুরু হয়। সাতটি বিভাগ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ১৯টি বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে ৭ হাজার ১৪১ জন। শিক্ষক ২৬৫ জন। ৩০৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পাঁচটি আবাসিক হল এবং শিক্ষকদের জন্য আছে দুইটি ডরমেটরি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের আয়তন ২৪৪ দশমিক ১৯ একর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে ৩৬টি বহুতল বিশিষ্ট ভবনের পাশাপাশি খেলার মাঠ, জিমনেসিয়াম ও মেডিক্যাল ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে ব্যাচেলর অব অনার্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স ডিগ্রি চালু রয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু রয়েছে ইংরেজি বিভাগ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে। শিক্ষার্থীদের সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে রয়েছে থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিবর্তন, গ্রাফিতিভিত্তিক সংগঠন বৃত্ত, অনুপ্রাস কণ্ঠচর্চা কেন্দ্র, ডিবেটিং সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাব, প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন বন্ধু, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছায়া জাতি সংস্থা, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সংগঠন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি প্রভুতি।
বিভিন্ন সূত্র জানায়,বিভিন্ন সময় কুবিতে তদ্বির ও ঘুষে কিছু মানহীন শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের কারণে কুবির পরিবেশ বিভিন্ন সময় অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এসব বিষয় প্রশাসনকে নজরদারিতে আনতে হবে। এছাড়া ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রশাসনে গতি আনতে আরো উদ্যোমী ভূমিকা নিতে হবে।
গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জাভেদ রায়হান বলেন, ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি ও ধূমপান করবে না বলে অঙ্গীকারনামায় সই করেন। কিন্তু বাস্তবে সেটি নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন,কুমিল্লা জেলা আহবায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ সাকিব হোসাইন বলেন,আমাদের শিক্ষা জীবন শেষে চাকরির কোটার অনিশ্চয়তায় অনেকটা কেটে গেছে। আমাদের গবেষণার দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ধারণা দিতে হবে বিশ^মানের করে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুরুল করিম চৌধুরী বলেন,বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিসি,প্রো-ভিসি,ট্রেজার মহোদয়সহ অন্যান্যরা ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছেন। সেনিরিখে আমরা দ্রুত সেমিস্টার শেষ করে পরীক্ষা নেয়ার জন্য কাজ করছি। তিনি আরো বলেন,আমরা ২য় সমাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি ২০২৫সালের প্রথম দিকে সেটির আয়োজন করা যাবে। প্রথম সমাবর্তনে আমরা ৮টি ব্যাচকে সনদ দিয়েছি। এবার ৫টি ব্যাচকে দিতে পারবো।
কুবির সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ডা.মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন,কোয়ালিটি শিক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে দুই শিফট করা যেতে পারে। সিট কম থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন,এখানে কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তার অপরাজনীতিতে জড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়েও নজর দিতে হবে।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণার সংস্কৃতি তৈরি করতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের গবেষণামুখী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিশ^ পরিমন্ডলে কুবিকে চেনানোর জন্য কাজ করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে গেলে যেন মূল্যায়ন পায়। আমাদের প্রযুক্তি বিষয়ক আরো উন্নতি প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন,বিশ^বিদ্যালয়ে গতি আনতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি রোধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দায়িত্ব সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারলে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন বলেও তিনি জানান।

আরো পড়ুন