শ্রমিকদল সভাপতির হেনস্থার শিকার এসিল্যান্ড


প্রতিনিধি:
কুমিল্লার লাকসামে খাস পুকুর উদ্ধারে গিয়ে ইউনিয়ন শ্রমিকদল সভাপতির হেনস্থার শিকার হয়েছেন এসিল্যান্ডসহ ৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম গ্রামে।
সরকারি ১১১ শতক আয়তনের পুকুরটি উদ্ধারে গিয়ে আজগরা ইউনিয়ন শ্রমিক দল সভাপতি সাহাবুদ্দিনের হেনস্থার শিকার হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার, আজগরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম ও গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে পুকুরের ৪২০ কেজি মাছ জব্দের পর বাজেয়াপ্ত করে বিক্রয়লব্ধ ৭০ হাজার টাকার সরকারি কোষাগারে জমা দেন, সহকারী কমিশনার।
অপর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অবৈধভাবে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি খনন ও বিক্রি করার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে শ্রমিক দলের সভাপতি সাহাবুদ্দিনের ১ লাখ টাকা জরিমানা ও খনন মেশিন জব্দ করেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিফাতুন নাহার। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে এ শ্রমিক দল নেতা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা চালান। অভিযুক্ত সাহাবুদ্দিন বড়বাম পশ্চিমপাড়ার আলী হায়দারের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম গ্রামে ৭৯ শতক আয়তনের ছিলইন তুলা পুকুরটি সম্প্রতি ২০ হাজার টাকায় ইজারা নেয় তেলিপাড়া সিআইসি মৎস্যজীবী সমিতি। ইজারা গ্রহিতা একই পুকুরে থাকা পৃথক মৌজার ৩২ শতক খাস আদায় করে থাকেন। এর আগে বিগত ৫/৬ বছর বড়বাম মৎস্যজীবী সমিতি পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর স্থানীয় আজগরা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি সাহাবুদ্দিন পুকুরটি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন। সম্প্রতি লাকসাম উপজেলা প্রশাসন ইজারা দরপত্র আহবান করলেও শাহাবুদ্দিন ইজারায় অংশগ্রহণ না করেই ওই পুকুরে মাছ চাষ অব্যাহত রাখেন। ইত্যবসরে তেলিপাড়া সিআইজি মৎস্যজীবী সমিতি পুকুরটি লীজ পায়। এরপর উপজেলা প্রশাসন বারবার পুকুর ছেড়ে দেয়ার জন্য বললেও শাহাবুদ্দিন কর্ণপাত করেননি। সোমবার জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদের নির্দেশনায় সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে পুকুরটি উদ্ধারে যান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার, আজগরা ইউনিয়ন সচিব রফিকুল ইসলাম ও গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিন। এ সময় শ্রমিক দল সভাপতি সাহাবুদ্দিন এসিল্যান্ড সিফাতুন নাহারসহ সরকারি কর্মচারীদের সাথে মারমুখি আচরণ শুরু করে। একপর্যায়ে ইউনিয়ন সচিব রফিকুল ইসলামকে টানা-হেঁচড়া করতে থাকেন সাহাবুদ্দিন। এ সময় তাকে উদ্ধারে গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিন এগিয়ে গেলে তাকেও শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুস সালামসহ স্থানীয় লোকজন তাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘টানা-হেঁচড়ার সময় সচিবকে উদ্ধার করতে গেলে আমার গায়ে গায়ে কিল-ঘুষি পড়ে। পরে সাহাবুদ্দিন আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।’
আজগরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার সাহাবুদ্দিনকে পুকুর ছেড়ে দেয়ার জন্য বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে সাহাবুদ্দিন অশালিন ও মারমুখী আচরণ শুরু করেন। এক পর্যায়ে এসিল্যান্ড ম্যাডাম গাড়িতে উঠেগেলে আমাকে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে সাহাবুদ্দিন। এ সময় গ্রাম পুলিশ কামাল উদ্দিন এগিয়ে আসলে তাকেও শারিরীক হেনস্থা করেন। পরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুস সালামসহ স্থানীয় লোকজন আমাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন। নতুবা আরও খারাপ পরিস্থিতি হতো।’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার বলেন, ‘বারবার বলার পরও তিনি পুকুর ছেড়ে না দেয়ায় জলমহাল ইজারা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ওইদিন আমরা পুকুরের মাছ জব্দ করতে যাই। এ সময় অবৈধ দখলদার সাহাবুদ্দিন আমাদের সাথে খারাপ আচর করেন। আমি চলে আসার পর সরকারি স্টাফদের হেনস্থা করেন। পরে ওই পুকুরের ৪২০ কেজি মাছ জব্দের পর বাজেয়াপ্ত করে বিক্রয়লব্দ ৭০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়।’
এসিল্যান্ড সিফাতুন নাহার আরো বলেন, ‘দু’/তিন মাস আগে ভেক্যু মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে অন্য একটি পুকুরের মাটি সরানোর দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে সাহাবুদ্দিনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এদে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এমন আচরণ করে থাকতে পারেন।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আজগরা ইউনিয়ন শ্রমিকদল সভাপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমার পুকুরের মাছ ধরতে আসলে সরকারি লোকদের সাথে তর্কাতর্কী হয়। আমি কাউকে মারধর বা হেনস্থা করিনি। বিষয়টি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মীমাংসা করে দিয়েছেন। পুকুরটি আমাকে দিয়ে দিয়েছে। খরচ-পাতি দিতে হবে।’