লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে বোরোর চাষ : ভালো ফলনে কৃষকরা খুশি

inside post
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
অনুকূল আবহাওয়া আর সময়োচিত পদক্ষেপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক জমিতে হয়েছে বোরো ধানের চাষ। শুষ্ক মৌসুমের কারণে ফলন ভালো হওয়া, বৈরি পরিবেশ না থাকায় নিরাপদে ফসল ঘরে তুলতে পেরে কৃষকরাও বেজায় খুশি। চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১১ হেক্টর অধিক জমিতে হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। ইতোমধ্যে হাওড়ের ৯২ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,  এ বছর এক লাখ ১০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমিতে। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চাইতেও ১১ হেক্টর বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় মৌসুম শুষ্ক থাকার কারণে এবার বোরো ধানের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। জেলায় মোট তিন লাখ ৮১ হাজার ৪১৫ জন কৃষক পরিবার বোরো ধানের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধান কাটার সময় শেষ হওয়ার আগেই কৃষকেরা এ বছর ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বোরো ধানের ভালো ফলনের জন্য কৃষকদেরকে বীজ, সার ও পানি ইত্যাদি উপকরণ নিশ্চিত করা হয়। সরকারি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তিন হাজার ৮০০ জন কৃষককে এক বিঘা করে বোরো ধান আবাদের জন্য প্রদান করা হয় সার ও বীজ। ৩৫ হাজার কৃষকের মাঝে দুই কেজি হারে ৭০ হাজার কেজি বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর এক কেজি হারে দেড় হাজার কৃষকের মাঝে হাইব্রিড বীজ বিতরণ করা হয়। জেলার কসবা উপজেলায় ৫০ একর জমিতে স্থাপন করা হয় সমালয়ের প্রদর্শনী। ফলে বিগত বছরের তুলনায় প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে নতুন উফশী জাতের যেমন ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান ৮৬, ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর বিভিন্ন প্রকার হাইব্রিড জাতের আবাদ এলাকা ৬ হাজার হেক্টর বাড়ানো হয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলমান থাকায় অন্যান্য বারের ন্যায় এবার অন্য জেলা থেকে কৃষি শ্রমিক এই জেলায় আসার সংখ্যা অনেক কম। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, রংপুর ও হবিগঞ্জ থেকে সাত হাজার কৃষি শ্রমিক এসেছেন ধান কাটার কাজে।এদিকে ধান কাটার জন্য জেলায় আগে থেকে ছিলো ৪৫টি কম্বাইণ্ড হারভেস্টার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আরো ৪৬ টি এবং চলতি মৌসুমে নতুন ৬৭ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর বিতরণ করা হয়েছে। ৫৬ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টরের মধ্যে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাওড়ে ৭০ শতাংশ ও ননহাওড়ে ৫০ শতাংশ ভর্তুকিমূল্যে বিতরণ করা হয়। জেলায় ১৫৬ টি কম্বাইণ্ড হারভেস্টর ও ২৮টি রিপার একযোগে ব্যবহার করা হয়েছে ধান কাটায়। গত ৩ মে সোমবার পর্যন্ত জেলায় হাওড়ের ৯৪ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। যার গড় ফলন ৪.১৯ মেট্রিকটন। অপরদিকে জেলায় ননহাওড়ে ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে গড়ে ৬০ শতাংশ জমিতে। কর্তিত এসব জমিতে গড় ফলন হয়েছ  ৪.১০ মেট্রিকটন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বলেন, ‘বোরো ধান চাষে জেলার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। শুষ্ক মৌসুম থাকায় এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় ৫-৭ দিন আগেই ধান পেকেছে। মণ প্রতি কাঁচা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা এবং শুকনো ধান এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন।’
আরো পড়ুন