একজন মুকুলের হাতে সাড়ে সাত হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান
আবদুল্লাহ আল মারুফ।।
ইকবাল হোসেন। এক সময় বেকারত্বই ছিল তার একমাত্র বাধা। নিজের টিউশনের টাকা ও পরিবারের সাহায্যে ভর্তি হন জেনেটিক পলিটেকনিকে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন তখনও ইকবাল হোসেনের কল্পনার বাইরে। দেখতে দেখতে ৪ বছরের কোর্স সম্পন্ন। ধোঁয়াশার চাদরে মোড়ানো স্বপ্নটা সত্যি করে চাকরি নিয়ে চমকে দেন তার পরিবারের সকলকে। বর্তমানে ইকবাল হোসেন কাজ করেন নামকরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোল্ড সিলভারের প্রকৌশলী হিসেবে।
হতাশায় কাতর ফায়জুল ইসলাম রাকিবের তখন একমাত্র সঙ্গী ছিল বেকারত্ব। পরিবারের বড় ছেলে হওয়াতে বাবার পর পরিবারের দায়িত্বটা তাকেই নিতে হতো। কিন্তু তার তো কোন চাকরি নেই। অথচ সেই বেকার যুবকই এখন তার সমবয়সী যুবকদের বেকারত্ব দূর করছেন। বুড়িচং উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠা করেছেন রয়েল আইটি নামের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যেখানে ৩-৪ জন প্রশিক্ষক নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন।
জেনেটিক হতে ১বছর মেয়াদি হায়ার ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ইউনাইটেড আইটি নামক ট্রেনিং ইন্সটিউিউট প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে কর্মজীবনে পা রাখেন তরুণ উদ্যোক্তা এমদাদুল হক। এখন কুমিল্লার নাম করা কয়েকটি ট্রেনিং সেন্টারের মধ্যে ইউনাইটেড আইটি একটি।
মারজাহান ইসলাম। চার বছরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষে এখন সরকারি কর্মকর্তা। কর্মরত আছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে।
মেহেদী হাসানতো ভালোবেসে প্রিয় প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে মিল রেখে প্রতিষ্ঠা করেছেন জেনেটিক কম্পিউটার নামে এক প্রতিষ্ঠান।
ইকবাল , ফায়জুল, এমদাদুল, মারজাহান, মেহেদী , অমিত দেবনাথর, শশীধরের মতো প্রায় সাড়ে সাত হাজার যুবকের কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করেছেন জেনেটিক আইআইটি। যার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান। যিনি অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান মুকুল নামে অধিক পরিচিত। দেবিদ্বারের সুলতান পুরের সন্তান মুজিবুর রহমান মুকুল। গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেকারত্ব দূরীকরণ ও আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যে মো. মুজিবুর রহমান মুকুল ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন জেনেটিক আইআইটি নামক কম্পিউটার ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানটি। অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের নজরে আসলে এটি সরকারি তালিকাভুক্ত হয়। সফলতার ২৬ বছর পর এবার শুরু হয় ২৭ বছরের নতুন পদযাত্রা।
বর্তমানে জেনেটিক পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এবং তার পাশাপাশি চলছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনলাইন মার্কেটিং, ফ্রিলেন্সিং, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলাপমেন্ট এবং রয়েছে যুবকদের জন্য বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। ভিন্ন রকম এই উদ্যোগের জন্য জেলা-উপজেলা এবং ও স্থানীয় পর্যায়ে পেয়েছেন নানা সম্মাননা।
জেনেটিক পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের আইসিটি লেকচারার এবং আইআইটি বিভাগের একাডেমিক ইনচার্জ প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান জানান, আমি গত ৯ বছর যাবত এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। আমিও এক সময় এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলাম, তারপর কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা এবং পরে কম্পিউটার সায়েন্সে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করি। শুরু থেকেই দেখে আসছি কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র, সরকারি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইটি সেবা দিয়ে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।
জেনেটিক পলিটেকনিকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান মুকুল বলেন, ১৯৮৯ সালে ক্রিয়েটিভ কম্পিউটার ল্যান্ড নামক প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে আমার কম্পিউটারে হাতেখড়ি। ১৯৯৫ সালে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যে মূলত জেনেটিক আইআইটি প্রতিষ্ঠা করা। সময়ের সাথে সাথে দেশে-বিদেশে কারিগরি বিষয়ে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেনেটিক আইআইটি হতে প্রশিক্ষণ নেয়া শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশ কর্মবাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের সাফল্যের সাথে সাথে জেনেটিক আইআইটির কার্যক্রম প্রসারিত হতে থাকে এবং প্রতিষ্ঠিত হয় জেনেটিক পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারিদের আন্তরিকতাপূর্ণ শ্রম, দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি প্রেম ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আকাক্সক্ষা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশ জেনেটিক’র প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।