দাউদকান্দির কালাডুমুর নদ এখন আবর্জনার ভাগাড়!
মহিউদ্দিন মোল্লা
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কালাডুমুর নদ। এটি এখন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গৌরিপুর ও ইলিয়টগঞ্জ বাজার এলাকায় ময়লা ফেলে গতিপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কালাডুমুর নদ উপজেলার গৌরীপুর বাজার সংলগ্ন গোমতী নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে গৌরীপুর, জিংলাতলি, ইলিয়টগঞ্জ উত্তর এবং দক্ষিণ ইউনিয়ন অতিক্রম করে ইলিয়টগঞ্জ বাজার হয়ে চান্দিনা উপজেলার পশ্চিমাংশ দিয়ে কচুয়া উপজেলায় পড়েছে।
সূত্রমতে, এই নদের পানি দিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা এবং চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার বিঘা জমির ধান চাষ করা হয়। এতে উৎপন্ন হয় সাড়ে বার লক্ষ মণ বোরোধান। এই নদে একসময় বর্ষায় মালবোঝাই নৌকা, ইঞ্জিন চালিত বড় বোট এবং কার্গো চলাচল করতো। কালের ব্যবধানে সে সব দিন এখন হারানো ইতিহাস। সাম্প্রতিক সময়ে কালাডুমুর নদের উৎস স্থলের পাশে গৌরীপুর সুবল – আফতাব উচ্চ বিদ্যালের সামনে মাইথারকান্দি খালের মুখে গৌরীপুর বাজারের সমস্ত বর্জ্য, পলিথিন-প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে। দূষণে কালাডুমুর নদ ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। অপরদিকে ইলিয়টগঞ্জ বাজারের ময়লা আবর্জনা সরাসরি কালাডুমুর নদে ফেলা হচ্ছে । দীর্ঘদিন পুনঃখনন না করায় বালি পলি জমে কালাডুমুর নদ ভরাট হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এস এম মিজান বলেন, খরা মৌসুমে প্লাবন ভূমির মৎস্য প্রকল্পগুলোতে পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি নৌ-পথের নাব্যতা সৃষ্টি, প্রাকৃতিক মাছের অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ সুরক্ষায় নদটি পুনঃখনন অপরিহার্য। পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত কালাডুমুর নদ বাঁচাতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
টুপটাপ সম্পাদক ছড়াকার ওমর ফারুক নাজমুল বলেন,পরিবেশ আর কৃষিকে বাঁচাতে কালাডুমুর নদকে বাঁচাতে হবে। কালাডুমুরের দূষণ রোধের পাশাপাশি পুন:খনন প্রয়োজন।
পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, কালাডুমুর নদ পুনঃখননের জন্য ১৯৯০ সাল থেকে ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছি। ২০বার সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, কোদাল মিছিল, প্রতিকী অনশন, নদী মেলা, নদী অলিম্পিয়াড করেছি। গৌরীপুর এবং ইলিয়টগঞ্জ বাজারের নাগরিক বর্জ্য-আবর্জনায় কালাডুমুর নদ দখল দূষণ বন্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নদটি রক্ষা পেলে কৃষি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি জনকল্যাণে বহুমুখী উপকারে আসবে।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন,পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায় নদ-নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আবর্জনা ফেলে নদ-নদীর ক্ষতি দুঃখজনক। ময়লা ফেলা বন্ধে গৌরিপুর ও ইলিয়টগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।