ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য টিকাতেই সহযোগীকে হত্যা

inside post
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
কলেজপাড়ার একক আধিপত্য খোকা ও জয়ের। তবে তাদের সকল সিদ্ধান্ত তাদেরই সহযোগী ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজ না মেনে করতেন বিরোধিতা। এই বিরোধিতার জের এবং এলাকায় একক আধিপত্যের জন্যই পরিকল্পিতভাবে বন্ধু খোকার নির্দেশে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয় ছাত্রলীগকর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি চালায়। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর নেত্রকোণা থেকে গ্রেপ্তারকৃত মূলহোতা জয় পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা এভাবেই স্বীকার করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন শনিবার (০৮ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘটনার সবিস্তার উপস্থাপনের পাশাপাশি উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন খোকার ঘনিষ্ঠ সমর্থক এবং বন্ধু জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়ের সাথে ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজের ছিলো পূর্ব বিরোধ। ৫ জুন বুধবার সকালে ভোটকেন্দ্রেও তাদের মধ্যে তর্ক হয়। সন্ধ্যায় বিজয় মিছিল চলাকালে প্রকাশ্যেই ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজকে পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে হাসান আল ফারাবী জয়। আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথেই সে মারা যায়। নিহতের পিতা বাদী হয়ে সাবেক ভিপি জালাল উদ্দিন খোকা, হাসান আল ফারবী জয়সহ ১৬ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একটি টিমের সহযোগিতায়, সদর থানা এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল আসামি গ্রেপ্তারের অভিযানে নামে। অবশেষে শুক্রবার ভোরে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হাসান আল ফারাবী জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সদর উপজেলাধীন নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের একটি ব্রিজের পাশের ঝোপ থেকে জয়ের দেখানোমতেই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশকে দেয়া জয়ের স্বীকারোক্তিমতে সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল উদ্দিন খোকা এবং হাসান আল ফারাবী জয় খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুর রহমান ইজাজও তাদের সাথেই চলাফেরা করতো এবং একই পাড়ার বাসিন্দা। কলেজপাড়া এলাকায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতো খোকা ও জয়। তবে তাদের সকল সিদ্ধান্ত ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজ ও তার কতেক সহযোগী মেনে না নিয়ে বিরোধিতা করতো। আর এ কারণেই ইজাজ ও তার কতেক সহযোগীর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলো খোকা ও জয়। তাদের মধ্যকার এই বিরোধ ক্রমশ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এলাকায় একক আধিপত্য টিকাতে  খোকা, জয় ও আরো ক’জন মিলে ইজাজ ও তার কতেক সহযোগীকে চরম শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার শহরের আরেকজনের কাছ থেকে খোকা অস্ত্র সংগ্রহ করে দুপুরেই জয়কে সরবরাহ করে ইজাজকে মারার নির্দেশ দেয়। সন্ধ্যে অনুমান সোয়া ছ’টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে কলেজপাড়ায় বিজয়োল্লাসের জন্য লোকজন জড়ো হয়। এসময় খান টাওয়ারের সামনে খোকা, জয় এবং ইজাজও ছিলো। খোকার সাথে কোন এক বিষয়ে ইজাজ তর্কে জড়ানো মাত্রই জয় উপস্থিক ২০/২৫ জনের সামনেই কোমর থেকে পিস্তল বের করে ইজাজকে গুলি করে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় কেউ একজনের মোবাইলে ধারণকৃত এই দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিমেষেই ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ইজাজকে গুলি করে কোমরে পিস্তল রেখে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাচ্ছে জয়। এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। ইতোমধ্যে থানায় দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। অবশেষ দুই দিনের মাথায় নেত্রকোণা থেকে ঘটনার মুলহোতা হাসান আল ফারাবীকে গ্রেপ্তারসহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধারে সক্ষম হয় পু্লিশ।
এদিকে ফারাবীকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে শনিবার দুপুরের দিকর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন ইজাজের স্বজনরা। এসময় তারা ক্ষোভ দেখান ও খোকাসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ আসলাম হোসেন জানান, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসাামি হাসান আল ফারাবীকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। নিহতের পিতার দায়েরকৃত হত্যা মামলাটি এসআই আবু বকর সিদ্দিকের তদন্তাধীন রয়েছে।’
আরো পড়ুন