আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে দেড় সহস্রাধিক কোটি টাকার অনিয়ম
আরো পড়ুন:
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি যেন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দেড় সহস্রাধিক কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিতে। খোদ কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিবেদনেই এ চিত্র ওঠে আসে। কোম্পানির ২০১৭-২০২২ অর্থবছরের নিরীক্ষায় এক হাজার ৭০৯ কোটি ৬৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৬০ টাকা ৭২ পয়সার আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়ে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মোট ২০টি খাতে আর্থিক অনিয়মের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানির নিয়মানুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের একটি নিরীক্ষা দল নিরীক্ষা সম্পন্ন করেই অডিট আপত্তি প্রদান করেন। বিগত ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নিরীক্ষা দল-০২ এর প্রধান উপ-পরিচালক হিয়া পাল নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পেশ করেন। প্রদত্ত ওই প্রতিবেদনে মোট ২০টি খাতে আর্থিক অনিয়মের বিবরণ তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে চাহিদাপত্র ব্যতীত অনিয়মিতভাবে দুই কোটি ২৪ হাজার ৭৬৯ টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়। আরএপিপিতে অন্তর্ভূক্তিকরণ ব্যতীত অনিয়মিতভাবে পরামর্শক সেবা ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। বিধি বহির্ভূতভাবে টিইসি গঠন করে টারবাইন বিল্ডিং ওভারহেড ক্রেন এর স্পেয়ার পার্টস ক্রয়ে অনিয়মিত ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ৩৪১ টাকা। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া আউট সোর্সিং জনবল নিয়োগে অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে ১৮ কোটি এক লাখ ৩৮ হাজার ১৭১ টাকা। পিডিবি’র কাছে পাওনা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বাবদ সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় এক হাজার ৬৪২ কোটি ৮৭ লাখ সাত হাজার ৬১১ টাকা ৭২ পয়সা। অস্থায়ী/মাস্টাররোল কর্মচারীদের বরাদ্দকৃত বাসার বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ করায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয় ৩৩ লাখ ১১ হাজার ৫০৮ টাকা। পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রকল্প পরিচালককে পরিশোধিত বিলে ভ্যাট কর্তন না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে তিন লাখ ২৬ হাজার ৪১৫ টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন ঠিকাদারের বিল থেকে কর্তনকৃত আয়কর বিলম্বে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করায় দুই শতাংশ হারে আদায়যোগ্য বণ্ডসুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৩১২টাকা। সার্বক্ষণিক গাড়ি প্রাপ্য কর্মকর্তাদের নিকট থেকে মাসিক প্রাপ্যতার অতিরিক্ত জ্বালানির মুল্য বাবদ আদায়যোগ্য ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ টাকা। কোম্পানির ডেলিগেশন অব ফিনান্সিয়াল পাওয়ার ২০১৭ লঙ্ঘন করে অফিস ডেকোরেশন খাতে অনিয়মিত ব্যয় হয়েছে চার কোটি সাত লাখ ৭৪ হাজার ৬৮২ টাকা। এপিএসসিএল’র গয়নাঘাট ব্রিজ ও এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের বিল থেকে আয়কর কম কর্তন করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ টাকা। অধিক সংখ্যক বোর্ড মিটিংয়ের কারণে সম্মানি ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ অস্বাভাবিক ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৪০ টাকা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত মেঘনার তীরভূমি ভরাট কাজে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সাত কোটি ২১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৭ টাকা। এপিএসসিএল’র পূর্ত নির্মাণ কাজে বীমা না করায় বিধিগত অনিয়ম সংগঠন এবং বীমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট বাবদ সরকারের প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার ৩৫২ টাকা। বিধি বহির্ভূতভাবে আরএফকিউ পদ্ধতিতে সিলিং অতিরিক্ত অনিয়মিত ব্যয় হয় চার কোটি ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৩ টাকা। পরিশোধিত সম্মানির ওপর নির্ধারিত হারে আয়কর কর্তন না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখ ৩১ হাজার ৬৮০ টাকা। এপিএসসিএল’র বিভিন্ন দপ্তরের পরিশোধিত বিলে ভ্যাট কর্তন না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৯ টাকা। এপিএসসিএল’র নিয়ন্ত্রণাধীন আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিশোধিত বিলে ভ্যাট কর্তন না করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে চার লাখ ২৫ হাজার ৮৬৭ টাকা। নিজ আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রেখে বোর্ডের পুর্বানুমোদন এড়ানোর জন্যে একক কাজকে একাধিক প্যাকেজে বিভক্ত করে একই সরবরাহকারী/ঠিকাদারের মাধ্যমে ইঞ্জিন ওভারহোলিং কাজে অনিয়মিত ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৮৯ লাখ এক হাজার ৪৬২ টাকা এবং কোম্পানির বাসা বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে বাসা বরাদ্দ থাকা সত্বেও বাড়িভাড়া প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয় ৪৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৪৮ টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কার্যালয়ের নিরীক্ষা দলের নিরীক্ষা সম্পন্নের পর প্রদত্ত অডিট আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ.এফ.এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘অডিট আপত্তি দেয়ার পর আমরা এসবের অনেকগুলোরই জবাব দিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেকগুলো ক্লিয়ার হয়ে গেছে।’