আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরা গেলো ট্রানজিটের প্রথম চালান

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মালামাল ভারতের। যাবে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের মালামাল আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে পৌঁছাতে ব্যবহৃত হবে বাংলাদেশের বন্দর ও সড়কপথ।এজন্য নির্ধারিত মাশুল ও ফি পরিশোধ করবে ভারত। সে লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিমতে বাংলাদেশের উপর দিয়ে নিজেদের দেশে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে ভারত। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে আগরতলায় পৌঁছেছে ট্রানজিট পণ্যের চারটি কন্টেইনার।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার দিকে আগরতলা স্থলবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে কন্টেইনারবোঝাই চারটি ট্রেইলার গ্রহণ করেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। ওই কন্টেইনার থাকা ৪৯.৮৩ মেট্রিকটন ডাল আসাম রাজ্যের গৌহাটি এলাকার ই.টি.সি. অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইণ্ডিয়া লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যাবে। অন্যদিকে ৫৩.২৫ মেট্রিকটন রড পশ্চিম ত্রিপুরার আগরতলা জেলা শহরের এম.এস. করপোরেশন লিমিটেড এর কাছে যাবে বলে আগরতলা কাস্টস্’র সুপারিনটেনডেন্ট ও আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রজস্ব কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যাণ্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভম্যান্ট অব গুডস্ টু অ্যাণ্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তির আওতায় এবং ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্ট্যাণ্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে নিজ দেশে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে ভারত। পরীক্ষামূলক প্রথম চালান হিসেবে চারটি কন্টেইনারে করে ৫৩.২৫ মেট্রিকটন রড ও ৪৯.৮৩ মেট্রিকটন ডাল নিয়ে গত ১৪ জুলাই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ‘সেজুতি’ নামের একটি জাহাজ। এ জাহাজটি গত মঙ্গলবার (২১ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নোঙর করে।বাংলাদেশের ‘ম্যাংগো লাইন লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতেরর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোলকাতা  থেকে পণ্যগুলো পাঠিয়েছে ‘ডার্সেল লজিস্টিক লিমিটেড’ নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান। আর এসব পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে ছিলো কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।
বিজ্ঞাপন

পরীক্ষামূলক এই ট্রানজিট পণ্যচালানের জন্য আগেই ফি নির্ধারণ করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর মধ্যে প্রতি চালানের জন্য ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি প্রতি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি মেট্রিক টনে ২০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ প্রতি মেট্রিকটন ১০০ টাকা, অ্যাসকর্ট চার্জ প্রতি মেট্রিকটন ৫০ টাকা, বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ প্রতি মেট্রিকটন ১০০ টাকা, কন্টেইনার স্ক্যানিং ফি প্রতি কন্টেইনার ২৫৪ টাকা। এছাড়া ইলেকট্রিক লক অ্যাণ্ড সিল ফি হিসেবে বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণ দিতে হবে বলে নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এবং ভারতের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আওতায় পরিক্ষামূলক প্রথম চালানের পণ্যগুলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পৌঁছেছে। ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বন্দরে পণ্যগুলো গ্রহণ করেছেন।’ ম্যাংগো লাইন লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সোহেল খান বলেন, ‘পণ্যগুলো আগরতলায় পৌঁছাতে পেরে আমরাও আনন্দিত। এর মাধ্যমে দুইদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রজস্ব কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশীদ জানান, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের চুক্তির আওতায় প্রথম চারটি কন্টেইনার আগরতলায় গেছে। এর জন্য মাশুল এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চট্টগ্রাম কাস্টমস্ হাউজে প্রসেসিং করা হয়েছে।’ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা কাস্টস্’র সুপারিনটেনডেন্ট জয়দীপ মুখার্জি জানান, ‘ট্রানজিট চালানের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়ীদেরই সুবিধা হবে।’