জেলা উপজেলায় কার্ডধারীদের দৌরাত্ম্য
।। এন এ মুরাদ।।
কুমিল্লায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে কার্ডধারী সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। নিউজের সাথে এদের কোন সম্পৃক্ততা নাই। কয়েকজন সংঘবদ্ধ হয়ে তথাকথিত প্রেস লেখা স্টিকার, আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে বিচরণ করছে বিভিন্ন উপজেলায়। এদের ভিড়ে মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীরা হয়ে পড়ছেন কোনঠাসা। প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীরা মাঠে গেলে প্রমাণ করতে হয় কে আসল আর কে নকল।
চিহ্নিত রাজনৈতিক , মাদক কারবারি, ওষুধ বিক্রেতা, সুদের ব্যবসায়ী, গাড়ির হেল্পার , রাজনীতিবিদ, স্টুডিওওয়ালা , ইন্সুরেন্স ওয়ার্কার, বিদেশ ফেরত বেকার, দেশী বেকারসহ অপেশাদার লোকের ছদ্ম পেশা এখন সাংবাদিকতা।
আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলো থেকে ৩-৫ হাজার টাকা দিয়ে কার্ড কিনে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে জেলা উপজেলার অলিগলি। গলায় ক্যামেরা, হাতে বুম, বুকে ঝুলে প্রেস লিখা রঙিন ফিতা। সাথে মোটর বাইক কিংবা প্রাইভেটকারে সজ্জিত টিম। ওদের গেটাপ ম্যাকাপ দেখলে যে কারো বুক ধরফর করে উঠবে। এভাবে চলে সাংবাদিকতার নামে তাদের ধান্দাবাজি।
২০২০ সালের পর থেকে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় শতাধিক কার্ডধারী নকল সাংবাদিক মাঠে বিচরণ করছেন। এদের বেশিরভাগই প্রেসক্লাবের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। নানা নামে গড়ে উঠা সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেই বেছে নিচ্ছেন ওরা। নিউজ শিখা বা লিখার সাথে কোন সম্পর্ক নেই- কপি পেস্টই একমাত্র ভরসা। কোথাও কোন দুর্ঘটনা বা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে মূলধারার সাংবাদিকদের আইডির সার্চ দিয়ে খুঁজতে থাকেন নিউজটি আপলোড হয়েছে কিনা। অনলাইনে পাওয়া মাত্রই সাথে সাথে কপি করে ওদের ভুঁইফোড় অনলাইন কিংবা পত্রিকায় মেরে দেয়।
বিভিন্ন থানার (ওসি) , সরকারি অফিস এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টেবিলে কার্ডধারী ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের ভিজিটিং কার্ডের সয়লাব, নামধারী মানবাধিকার সংগঠন, ভুঁইফোঁড় অনলাইন ও আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানাচ্ছেন তারা।
এ পেশায় এখন অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আবির্ভাব। সাংবাদিকতার পেশাকে ঢাল হিসাবে ব্য্বহার করতে নিচ্ছেন পত্রিকার কার্ড। বিভিন্ন প্রোগ্রামে চেয়ার দখল পত্রিকার বিজ্ঞাপন, প্রেক্লাবের চেয়ার, অবৈধ পন্থায় মাটি ব্যবসা, ড্রেজার ব্যবসা, ট্রাক্টর ব্যবসাসহ নানা রকম দখল বাণিজ্যে তারা সক্রিয়। লেখালেখিতে অভ্যস্ত না হলেও ক্ষমতার অপব্যবহারে কিন্তু ঠিকই ব্যস্ত। কারণে অকারণে করছেন ফেসবুক লাইভ। কোনটি সংবাদ আর কোনটি সংবাদ না এই বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা নেই। তবু পরিচয় দেয় আমি সাংবাদিক।
অপেশাদার কার্ডধারী ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের কারণে পেশাদার সাংবাদিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদমাধ্যম চরম ক্ষতিগ্রস্থ। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি এবং নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকা- চালাচ্ছেন ভুয়া কার্ডধারীরা। এ ধরনের ভুঁইফোঁড় কথিত সাংবাদিক বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার, ভেকু, বসতবাড়ি, ক্ষুদ্র কারখানা, বেকারিসহ নানা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সংবাদ প্রচার কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। এছাড়াও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বুম হাতে অথবা আইডি কার্ড ঝুলিয়ে তারা উপস্থিত হয় সেখানেও পরিচয় দিতে গিয়ে অনেকে উচ্চারণ করেন সাম্বাদিক।
এসব ভুঁইফোঁড় কার্ডধারী সাংবাদিকের দৌরাত্ম্যে মূলধারার সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্থ। তাদের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে সাংবাদিরা আজ বিব্রত। এমন বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের কড়া নজরদারি এখন সময়ের দাবি ।
লেখক:মুরাদনগর প্রতিনিধি,দৈনিক আমাদের কুমিল্লা।
মোবাইলঃ০১৬৭২-৪১৬৫২৩