পালালেন সেই দাম্ভিক বাহার-সূচনা

তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
১৮জুলাই। দুপুর ১টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়িতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। একটানা সাড়ে ৫ঘণ্টা সংঘর্ষের পর একরকম পিছু হটে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি। তারা ছাত্রদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মহাসড়ক ছেড়ে শিক্ষার্থীরা যার যার জায়গায় চলে যাওয়ার পথে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র এমপি বাহার কন্যা তাহ্সীন বাহার সূচনা আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে ছাত্রদের আক্রমণের চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগের সবার হাতে ছিল রিভলবার, শটগান, দেশীয় অস্ত্র। সূচনার সাথে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নিয়াজ পাভেল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মাহমুদ সহিদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম জুয়েল, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকনকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
১৮ জুলাই নেটওয়ার্ক সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কুমিল্লা জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। ১৯ জুলাই কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনের বাড়িতে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে বেশ কয়েকজনকে মারাত্মক আহত করে। এ ঘটনায় বিএনপিকে উল্টো মামলা দেওয়া হয়। বাদ যায়নি সাংবাদিকও। এরপর চলে আরও নারকীয় তা-ব। এর সব কিছুতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমপি বাহার ও তার মেয়ে সূচনা।
৩ আগস্ট কুমিল্লার মানুষ আরেক নৃশংসতার শিকার হয়। কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল হওয়ার কথা ছিল। এমপি বাহার ও মেয়র সূচনা সেদিন অন্তত হাজারো অস্ত্রধারীকে ভাড়া করেন। কিশোরসহ অন্তত শতাধিক কর্মীর হাতে ছিল রিভলবার, শটগান। অন্যদের হাতে ছিল চাপাতি, রডসহ ধারালো অস্ত্র। ছাত্রদের সম্ভাব্য সব প্রবেশ পথে ওঁৎ পেতে থাকে তারা। দুই ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পুলিশ লাইন পর্যন্ত অগ্রসর হলে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মুহুর্মুহু গুলি শুরু করে। একই সময়ে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর, রানির দিঘির পাড়, লিবার্টি চত্বর, রেসকোর্স ও বাগিচাগাঁওয়ে গোলাগুলি শুরু হয়। বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সহিদ, রিন্টু ও কাউন্সিলর জাবেদ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। পরদিন ৪ আগস্ট ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে গুলি ছোড়েন বাহারের অনুসারীরা। তারা আলেখারচর, জাগুরঝুলি, কোটবাড়ি বিশ্বরোড, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। কোটবাড়িতে এক ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গুলি চালালে ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে সেনবাহিনীর সাঁজোয়া যানে উঠে আন্দোলন শুরু করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের ওপর সেনাবাহিনীও ক্ষুব্ধ হয়। বিকেল নাগাদ সেনাবাহিনী ছাত্রদের কাতারে চলে আসে। এর মধ্যেই উধাও হয়ে যান বাহার-সূচনা। সন্ধ্যা থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও হাওয়া হয়ে যায়। ৫ আগস্টের ঘটনা সবারই জানা।
এত এত অস্ত্রধারী ও তাদেরকে সহিংসতার জন্য ভাড়া করা দাম্ভিক সূচনা-বাহাররা আজ কোথায়, এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।