পুরুষের জন্য কি আংটি ব্যবহার করা বৈধ?

 

ইসলামের দৃষ্টিতে আংটি ও পাথর মানব জাতির সার্বিক মঙ্গলের জন্য ইসলাম বস্তু জগতের সব রকম কল্যাণ ও অকল্যাণের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। জ্ঞান রাজ্যের সকল শাখা সম্পর্কে ইসলামের মৌল ও একমাত্র গ্রন্থ আল কুরআন হচ্ছে সুবিসৃত প্রামান্য দলিল। এই আল-কুরআন সমগ্র মানব-জাতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয় সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আলোকপাত করেছে। ইসলামের আবির্ভাব কালে হজরত আলী (রাঃ) হজরত ওসমান (রাঃ) সহ তদানীন্তন নেতৃস্থানীয় আরব অভিজাত ব্যক্তিবর্গের হাতে মহামূল্যবান রত্ন-পাথর শোভা পেলেও ইসলাম অজ্ঞাতকারণে রত্ন-পাথর সম্পর্কিত বিষয়টি অত্যন্ত প্রচ্ছন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) এর হাতে আকীক পাথর শোভা পেলেও আমরা মহামূল্যবান রত্ন-পাথরের ব্যবহার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাই না । তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইসলাম রত্ন-পাথর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

মহানবী (সা.) এর আংটি ব্যবহার: আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সাধারণত কোনো প্রকার অলঙ্কার ব্যবহার করতেন না। রাষ্ট্রীয় দাফতরিক কাজের প্রয়োজনে সীল মোহর হিসেবে রূপার আংটি ব্যবহার করেছেন। সে আংটির হলকা বা রিং এবং নগিনা বা পাত উভয় ছিল রূপার। তাতে লেখা ছিল- মুহাম্মাদ রাসূল আল্লাহ। তিনি এ আংটি ডান হাতের

কনিষ্ঠাঙ্গুলে পরতেন। তিনি কখনো আংটিতে পাথর ব্যবহার করেনি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। তাই কোনো ফকীহের মতে পুরুষ শুধু প্রয়োজনেই আংটি ব্যবহার করতে পারবে, কারো কারো মতে পুরুষের জন্য সাধারণভাবে আংটি পরা অনুমোদিত, আবার কারো মতে আংটি ব্যবহার করা সুন্নাত; তবে সর্বাবস্থায় সেটি শূধুমাত্র রূপারই হতে হবে।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-এর রুপার আংটি তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর হাতেই ছিল। অতঃপর সেটি আবু বকর (রা.)-এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর হাতে। এরপর ওমর (রা.)-এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর হাতে ছিল। অতঃপর ওসমান (রা.)-এর হাতে এলে একদিন তিনি কূপের কাছে অবস্থানকালে হঠাৎ তাঁর হাত থেকে সেটি কূপে পড়ে যায়। পরে তাঁর নির্দেশে কূপের পানি সম্পূর্ণ নিষ্কাশন করা হয়; কিন্তু সেটি আর পাওয়া যায়নি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২১৫)

কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতির উদ্দেশ্যে কোনো পাথর ব্যবহার করার কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। বরং রাসুল (সা.) এ ধরনের ভিত্তিহীন বিশ্বাসের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার পরে আমার উম্মতের ব্যাপারে আমি পাঁচটি বিষয়ের আশঙ্কা করছি। এর মধ্যে রয়েছে তাকদিরে অবিশ্বাস এবং গ্রহ-নক্ষত্রের বিশ্বাস।’ (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪১৩৫) তাই ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা নেতৃত্ব লাভ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের আংটি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।