যে বাগানে সুন্দরী নৃত্য করে!

 

ছাদ জুড়ে গাছ। গাছে গাছে সুন্দরী নৃত্য করে। পাকুড় গাছে সুন্দরী নারীর আদল। ধ্যানে মগ্ন কোন এক পুরুষ। জিরাপ দোল খায়। কিংবা রেসলার তার রেসে ব্যস্ত। এই দৃশ্য কুমিল্লা নগরীর শুভপুর এলাকার একটি ছাদেও বনসাই বাগানের। এছাড়া এই বাগানের গাছে ফুটে উঠেছে আল্লাহ,মোহাম্মদ(সাঃ) এর নাম। এটি বনসাই বাগান। গাছকে বিভিন্ন অবয়ব দেয়া হয়েছে। যেকোন দর্শনার্থী বাগানে ঘুরতে গিয়ে ভাবনার অতলে হারিয়ে যাবেন। বাগানের প্রতিষ্ঠাতা হাসান ফিরোজ। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক পরিচালক ছিলেন। তিনি লিখেছেন কবিতা উপন্যাস মিলিয়ে ২০টি বই। বনসাই নিয়েও তার বই রয়েছে ‘বনসাই নির্মাণ’। তিনি ৩৫বছর ধরে গাছ দিয়েই লিখছেন শৈল্পিক কবিতা।
গাছের মধ্যে রয়েছে,চায়না বট.কুশি বট,পাকুড়,কৃষ্ণ চন্দন,বোগেনবেলিয়া,বাঁশ,কাঁঠালি বট,লুব্বা বট,কালি বট,মেহগনি,খেজুর,লিমন এলাচি ও কমলাসহ প্রভৃতি।
শুরুর গল্প বলতে গিয়ে হাসান ফিরোজ বলেন, তার মা গাছপ্রেমী ছিলেন। সেই থেকে তিনি গাছ ভালো বাসেন। ৭৬সালের দিকে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তেন। তখন দেখেছেন এক ভদ্রলোক জাপান থেকে একটি মৃত বনসাইয়ের শো-পিস হিসেবে এনেছেন। সেটা দেখে তার মনে হলো এটাা তো তিনিও পারবেন। তিনি অনেক দিন থেকে নিজে বনসাই গাছ সৃষ্টির চেষ্টা করেন। সফল হন ১৯৮৬সালের দিকে। এরপর আর থেমে থাকেননি। ৫০ প্রজাতির প্রায় ৩০০টি বনসাই গাছ তৈরি করেছেন। সন্তান যত্নে তিনি এগুলো লালন পালন করছেন।
তিনি বলেন,নিজেরা সন্তানরা রাগ অভিমান করে। কিন্তু এরা বোবা সন্তানের মতো। মুখ ফুটে বলতে পারে না। তবে বুঝে নিতে হয়। তাদের কখন কি খাবার কি চিকিৎসা লাগে সে নিরিখে ব্যবস্থা নিতে হয়। প্রথম দিকে পরিবার বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি। তাদের কথা- এগুলোতে ফল নেই সবজি হয়না। এতো খরচ করে লাভ কি? এখন অবশ্য তারা নিজেরাও যত্ন নেন। আনন্দের জন্য তিনি ৩৫ বছর ধরে গাছ গুলো পালন করছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,দোতল বাড়ি। বাড়ির পুরো ছাদ জুড়ে বনসাই। মাঝে ছাউনি দেয়া কক্ষ। এর মধ্যে জৈব সার,মাটি ও নানা যন্ত্রপাতি। হাসান ফিরোজ তার দিয়ে বেঁধে গাছকে বিভিন্ন আদল দিচ্ছেন।
কুমিল্লা গাডের্নার্স সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. আবু নাইম বলেন, বনসাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়। দেশে দিন দিন বনসাইয়ের চাহিদা বাড়ছে। এর বাণিজ্যিক মূল্যও বেশ।
কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন,মানুষ মনের আনন্দে বনসাই সংরক্ষণ করেন। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যতিক্রমী বাগানিদের সরকার পুর¯ৃত করে থাকে।