৫০ হাজারে দিয়েছেন সাড়ে ৩ লাখ, তবু নিয়ে যান গরু!

আরো দাবি ৪০হাজার!

সানোয়ার হোসেন।।
জন্মান্ধ তিন ভাই বোন। হাতড়ে পথ চলেন। অন্ধ হওয়ায় একমাত্র বোন আছিয়ার হয়নি বিয়ে। বাপের বাড়িতেই থাকেন তিনি। স্থানীয়দের দয়া দাক্ষিণ্যে চলে ঘর-সংসার। ভূমি বলতে বসতভিটাটুকু। সেটাও বন্ধক রেখেছেন। সুদে আনা ৫০ হাজার টাকার বিপরীতে সুদ ও আসলে দিয়েছেন ৩ লাখ ৫০ হাজার। তবু মিলেনি মুক্তি। পাওনাদার দাবি করছেন আরো ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের আতাকরা গ্রামে। জন্মান্ধ ক্বারী আবু সায়েদের স্ত্রী লায়লা দায়মুক্তির জন্য পাওনাদার একই গ্রামের মাফিয়া বেগম ও তার মেয়ে লিপির পায়ে পড়েছেন, তবু গলেনি তাদের মন। জন্মান্ধ পরিবার ও গ্রামবাসী স্থানীয় আকাব বাজারে গত বুধবার হয়রানির প্রতিবাদে করেছেন মানববন্ধন। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে পাওনাদার মাফিয়া বেগম গং রাতে জন্মান্ধদের বাড়ি গিয়ে তাদের গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু সাইয়েদের পরিবারের চিৎকার শুনে গ্রামবাসী এসে মাফিয়াদের কাছ থেকে গরু উদ্ধার করে এবং থানা পুলিশে খবর দেয়। লেনদেনের সময় দেয়া স্ট্যাম্প দেখানোর শর্তে ছাড় পান তখন। আর এরপর রাতারাতি তথাকথিত ওই স্ট্যাম্পে পাওনা হয়ে যায় ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
বৃহষ্প্রতিবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় জন্মান্ধ তিন ভাই বোনের বসতভিটা ও জীর্ণ ঘর। অন্ধ আবু সাইয়েদের বড় মেয়ে আফরোজার প্রতিবন্ধী ছেলে উঠোনে ছাগল নিয়ে খেলছে। আবু সাইয়েদের চার মেয়ে, বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সেও প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্বামী নিয়ে বাবা আবু সাইয়েদের ঘরে থাকে। যেখানে মাটিতে পাতানো বিছানায় থাকেন তারা। অন্ধ ক্বারী আবু সায়েদ জানান বছর দুয়েক আগে একই গ্রামের মাফিয়া বেগমের কাছ থেকে। এর বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করি। এরপর তারা আরো ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করে।
তবে পাওনাদার মাফিয়া বেগম ও মেয়ে লিপির দাবি আবু সায়েদ নিয়েছেন প্রতি লাখে ২ হাজার টাকা সুদে ২ লাখ টাকা। তারা একটি লিখিত স্ট্যাম্পের ফটোকপি প্রদর্শন করে যাতে আঙ্গুলের চাপ ও স্বাক্ষর রয়েছে। স্বাক্ষীর জায়গায় আবু সায়েদের তিন মেয়ের নাম। তারা দাবি করেন এই দুই লাখের সুদ মাসে চার হাজার টাকা হিসেবে যা আসে সব টাকা দিতে হবে আবু সায়েদকে।
স্ট্যাম্পে উল্লেখিত পাওনার কথা শুনে অবাক হয়েছেন আবু সায়েদের স্ত্রী। সাদা স্ট্যাম্পে ৫০ হাজার টাকা নেয়ার সময় আমি সাদা স্ট্যাম্পে টিপসই দিয়েছি, আমি লিখতে পারিনা। আর আমার বড় মেয়ে আফরোজা স্বাক্ষীর জায়গায় স্বাক্ষর করেছে। এখন তারা অলিখিত স্ট্যাম্প লিখে নকল স্বাক্ষর দিয়ে জালিয়াতি করছে।