৮০ লাখ টাকায় দুই খুন

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
গোষ্ঠিগত সংঘর্ষের ঘটনায় চলমান হত্যা মামলা নিষ্পত্তিতে ৮০ লাখ টাকার লেনদেন। টাকা নিয়েও আপোষের বদলে মামলা চালিয়ে যাওয়াই কাল হলো চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুলের জন্য। শেষতক ঘটলো জোড়া খুন। কিলিং মিশনে অংশ নেয়া তিনজনের অন্যতম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম রাব্বী গ্রেপ্তার, ঘটনার স্বীকারোক্তি প্রদানের মাধ্যমেই বেড়িয়ে এলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন ঘটনার নেপথ্য কাহিনী।
জেলার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক ও তার সহযোগী বাদল সরকার গুলিতে নিহতের ঘটনা পুরো এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ইতোমধ্যেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাজীপাড়া মহল্লার মমিনুল ইসলামের পুত্র, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম রাব্বীকে (৩৭) ভারতে পলায়নকালে মঙ্গলবার রাতে কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী বায়েক ইউনিয়নের বিদ্যানগর (অষ্টজঙ্গল) গ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ডাকাতি মামলার আসামী রাব্বী বেশ কিছুদিন ধরে ঘাতক নজরুলের সঙ্গে চলাফেরা এবং তার বাড়িতে আশ্রিত থাকার সুবাধেই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়। গ্রেপ্তারকৃত রাব্বি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সেসহ তিনজন জড়িতের কথা স্বীকার করে জানায়, মামলার নিষ্পত্তির কথা বলে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আপোষ না করায় এরশাদুলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তিনজনে মিলে। এছাড়া অর্থ জোগাড় ও অন্যান্য সহায়তায় মিশনে আরো অন্তত ৬/৭ জন জড়িত ছিলো। তবে হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে কি না সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। বুধবার দুপুরে রাব্বীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণের জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয় বলে পুলিশ নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, গোষ্ঠিগত সংঘর্ষে বিগত ২০১৯ সালে ১ এপ্রিল এরশাদুল হকের চাচাতো ভাই সাইদুল্লাহ (৩০) খুন হয়। এ ঘটনায় নান্দুরা গ্রামের আবু নাছির ও তার ছেলে নজরুল ইসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন এরশাদুল। পরে মামলাটি নিষ্পত্তির কথা বলে আসামীদের থেকে ৮০ লক্ষ টাকা নেন এরশাদুল। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েও আপোষ না করে মামলা চালিয়ে যাওয়ায় এরশাদুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নজরুল। সম্প্রতি ওই মামলায় নজরুলের বাবা আবু নাছিরকে কারাগারে পাঠান আদালত। রাব্বীর সঙ্গে নজরুলের পূর্বপরিচয় ছিলো। একটি ডাকাতির মামলায় গ্রেপপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর গ্রেপ্তার এড়াতে রাব্বী গত এক মাস ধরে নজরুলের সঙ্গে তার বাড়িতে আশ্রিত হন। নজরুলের সমস্যার কথা জেনে এরশাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে ঘটনার দিন (১৭ ডিসেম্বর) রাব্বী এবং নজরুল পৃথক দুটি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে যান। প্রথমে এরশাদুলকে বহনকারী মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন রাব্বী। এরপর নজরুল তার মোটরসাইকেল থামিয়ে এরশাদুল ও বাদলকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। হত্যাকাণ্ডের পরপরই তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে চলে আসেন। এরপর তারা আলাদা হয়ে চলে যান সীমান্তে। মঙ্গলবার রাতে কনবার বায়েক সীমান্তের অষ্টজঙ্গল গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে হাজির করে। তবে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে কি না সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, ‘ডাবল মার্ডার ঘটনায় আশরাফুল আলম রাব্বি অন্যতম প্রধান আসামী। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে এই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক (৩৮) ও তার সহযোগী বাদল সরকার (২৭)। এরশাদুল নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নান্দুরা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের ছেলে এবং বাদল সরকার কুড়িঘর গ্রামের সন্তোষ সরকারের ছেলে। এ ঘটনায় নিহত এরশাদুলের ছোট ভাই আক্তারুজ্জামান বাদী হয়ে ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।