ডাকঘরে সঞ্চয় পত্রে ঘুষ ছাড়া চলে না কার্যক্রম

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা ডাকঘর সঞ্চয় পত্রের গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। গ্রাহকদের বেকায়দায় ফেলে নিয়ম-কানুনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের ফাঁদ তৈরি করছেন পোস্ট মাস্টার মাসুদুর রহমান। চান্দিনা উপজেলা সদরের ওই পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের এমন অভিযোগের শেষ নেই। ঘুষ দিলে মিলে সঞ্চয় পত্র, ঘুষ ছাড়া চলে না কোন কাগজপত্র! ঘুষ না দেওয়া গ্রাহকদের হতে হচ্ছে অপদস্থ । আর বিভিন্ন অযুহাতে মাসের পর মাস শুনতে হচ্ছে ‘আজ না কাল’।
বিধি মোতাবেক রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ডাকঘরগুলোতে আর্থিক লেনদেন করার কথা। কিন্তু চান্দিনা উপজেলা সদরের ডাকঘরে ১২টার পর স্বাভাবিক ভাবে কোন প্রকার লেনদেন করতে চান না পোস্ট মাস্টার মাসুদুর রহমান সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১২টার পর বাড়তি টাকায় চলে কার্যক্রম।
ডাকঘরের একজন সঞ্চয় পত্রের গ্রাহক সালমা বেগম জানান, ‘বই নেয়ার সময় টাকা চায়, গতকালকেও অনেক জনের কাছ থেকে টাকা নিছে। আর টাকা না দিলে যা অপমানের কথা কয়! চেয়ার থেইক্কা তুইল্লা দেয়। পোষ্ট মাষ্টার তাদের অফিসের লোকজনকে কয়- চেয়ার সরাও সবাইকে বাইরে যেতে বল।’ পোস্ট মাস্টারের এমন আচরণে ওই গ্রাহক আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কি শিয়াল কুত্তা নাকি ?
পাশ্ববর্তী দেবিদ্বার উপজেলা থেকে আসা জসিম উদ্দিন জানান, আমার স্ত্রীর নামে করা আমানতের মেয়াদ শেষে উত্তোলনের আবেদন করে ২মাস পার হলেও টাকা দিচ্ছে না পোষ্ট মাষ্টার মাসুদ। বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে বারবার তারিখ দিয়ে ঘুরাচ্ছেন।
বরুড়া উপজেলার এক নারী গ্রাহক জানান, আমি তিন বছর মেয়াদী ৪ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করি। গত তিন মাস আগে ব্যাংক থেকে আমার টাকা কর্তণ করে ডাকঘরের একাউন্টে চলে আসে। কিন্তু পোস্ট মাস্টার ঘুষ ছাড়া কাগজপত্র প্রস্তুত না করায় আমার ফিক্সড ডিপোজিট কার্যক্রম তিন মাস পরও শুরু হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী গ্রাহক জানান, আমি অনেক দিন ধরে আমার আমানতের লভ্যাংশ তুলতে আসি, কিন্তু পোষ্ট অফিসে ভীড়ের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দুপুর বারোটা পার হয়ে যায়। আগের পোস্ট মাষ্টার যারা ছিলেন ২টা পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতেন। কিন্তু তিনি (মাসুদ) ১২টার পর আর টাকা দিতে চান না। ১২টা বাঁজতেই বলেন, এখন বন্ধ। বের হয়ে যান। তখন বাধ্য হয়েই আমরা বকশিস দিয়ে টাকা উঠিয়ে নেই।
দুপুর ১২টায় কেন গ্রাহকদের মুনাফার টাকা দেয়া হয় না এমন প্রশ্নে পোস্ট মাস্টার মাসুদুর রহমান বলেন, দেড়টার পর টোটাল লেনদেন বন্ধ, কোন লেনদেনই করতে পারবো না আমরা। দেড়টা পর্যন্ত হেড অফিস করবে, থানা অফিস ১২টা। আমরা এর পর যদি দেই মানবতা করে দেই। ১২টার পর বাড়তি টাকা নেওয়া ও ঘুষ নিয়ে সঞ্চয়পত্র প্রদান সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ওই পোস্ট মাস্টার।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা ডিপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. মনজুরুল আলমের সাথে ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রাহকদের সাথে লেনদেন করার সময় সকাল ৯টা থেকে ২.৩০টা পর্যন্ত নির্ধারিত আছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের আমানত গ্রহীতাদের ক্যাশ টাকা দিতে সমস্যা হয়। এর অর্থ এই নয় যে আমাদের গ্রাহকরা ১/২মাস ঘুরতে হবে। আমাদের টার্গেট দেয়া থাকে প্রতি বছর কত টাকা খরচ করতে পারবো কিন্তু এর চেয়ে চাহিদা দ্বিগুণ থাকায় টাকা বিতরণে কিছুটা বিলম্ব হয়। আর ওই পোস্ট অফিসে দায়িত্বে থাকা পোস্ট মাস্টার অনিয়ম করে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।