কারার দুর্নীতির টাকায় এমপি’র পদ!

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাক্ষণপাড়া) আসনের সাবেক এমপি এম এ জাহের। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারাগারসহ বিভিন্ন বিভাগে ঠিকাদারি করে দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। কুমিল্লা কারাগারের ঠিকাদারি কাজে করেছেন ব্যাপক দুর্নীতি। জেলখানার ভেতরে ১০ টাকার ওষুধ ১০০ টাকায় সাপ্লাই দিয়েছেন। এছাড়া কারা বিভাগের বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য করে কামিয়েছেন শত কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে সেই টাকা দিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে কিনেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি‘র পদ। প্রশাসন ম্যানেজ করে এমপি পদ নেযার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন একই আসনের আওয়ামী লীগ নেতা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন। এদিকে সাবেক এমপি আবু জাহের, তার ভাতিজা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব অপি এবং আবু সায়েব বাপ্পীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মাদকের পৃষ্ঠপোষকতা, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করা হয়েছে দুদকে। রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এই অভিযোগ করেন। অপরদিকে এম এ জাহেরকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করেছে দুদক। গত ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সাবেক এমপি আবু জাহের, তার ভাতিজা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব অপি এবং আবু সায়েব বাপ্পী গা ঢাকা দিয়েছেন। এখন স্থানীয়রা তাদেও বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়.জাহেরের ছেলের নামে রয়েছে দেড় কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি, স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি টাকার মূল্যের গাড়ি, নিজের নামে ও স্ত্রীর নামে কসবা- নয়নপুর রোডে মল্লিকা সিএনজি ও ফিলিং স্টেশন। ১২০ শতক জায়গার ওপর গড়ে তোলা ফিলিং স্টেশনের মূল্য ২০০ কোটি টাকা। জাহের রাজনীতি না করলেও আপন বড় ভাই ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলার নেতা। আবু তাহের উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে আসেন আবু জাহের। প্রথমে তিনি হন উপজেলা চেয়ারম্যান। পরে তখন কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি ছিলেন প্রয়াত আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কেটলি মার্কায় নির্বাচন করে এমপি হন। অভিযোগ রয়েছে, এ সময় সদর আসনের সাবেক এমপি বাহার ও প্রশাসনকে টাকা দিয়ে এমপি হন আবু জাহের।
সূত্র আরো জানায়, জাহের উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি থাকার সময় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, স্কুল ও কলেজের উন্নয়নে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। সরকারি থোক বরাদ্দ, টিআর, কাবিখাসহ অন্যান্য উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন বলেন,২০১৭ সালে কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী ছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন রিয়ার এডমিডিয়াল আবু তাহের। কুমিল্লা জেলার ১৬ উপজেলায় ১৫টি কেন্দ্র ছিলো। তিনি ১০উপজেলায় পাসের পরে তাকে ফেল দেখিয়েছেন দুর্নীতিবাজ ডিসি এবং রিটার্নিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম। আবার ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন সেই ডিসি জাহাঙ্গীর আলম। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমানের সাথে যোগসাজশে তিনি পাস করার পরও তাকে ফেল ঘোষণা করা হয়েছে। তার জায়গায় অনিয়ম করে আবু জাহেরকে পাস দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য- বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা দুটি ভারতের সীমান্তবর্তী। যেকারণে এই এলাকা অবৈধ মাদক পাচার ও চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় এমপির ভাতিজারা এই দুই উপজেলার মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন। এই দুই উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের আইনগত সহায়তা প্রদান ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের হেনস্তা করা হয়। এছাড়া স্থানীয় বাজার ও সিএনজি অটো রিকশার স্ট্যান্ডগুলোর ইজারা নিয়ে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়।

inside post
আরো পড়ুন