কোরবানির পশু নিজেরাই জবাই করি — আবু সুফিয়ান রাসেল
দাদা ছিলেন খাঁটি কৃষক। আমার জন্মের বছর জমিতে প্রচুর ফসল হয়। এনিয়ে তো আমার গর্বের শেষ নেই। আর সে বছর থেকেই আমরা কোরবানি দেওয়া শুরু করি। যৌথ বা ভাগে কোরবানি দেওয়ায়ার বিপক্ষে দাদা ও বাবার কঠোর নীতি। তাই আমরা এখনও একাই কোরবানি দেই।
বাবা প্রায় বলেন, যদি ভাগে কোরবানির সাত শরিকের একজনের টাকা যদি অবৈধ হয়, দর দাম নিয়ে কারও মনোমালিন্য থাকে। ঈদের পূর্বের দিনগুলোতে পশু কার ঘরে রাখবে, কে খাওয়াবে অনেক সময় এসব নিয়েও মনকষাকষি হয়। গোস্তোর ভন্টন, গরুর বিশেষ বা গুরুত্ব পূর্ণ অংশ নেওয়া নিয়েও যদি কারও মনে কষ্ট থাকে, তবে একজনেরও কোরবানির শুদ্ধ হবে না। কোরবানির মূল শিক্ষা হলো আমিত্ব, হিংসা, অহংকারকে কোরবানি করা। তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশা করা যায়। দাদা চলে গেছেন বহু আগে। আমার জন্মের এক যুগের ও বেশী সময় আমরা খাসি কোরবানি দিয়েছে।
কোরবানির পূর্বে স্কুল ঈদের ছুটি থাকতো। খাসি ক্রয়ের পর আমারও দায়িত্ব বেড়ে যেতো। ঘাস খাওয়ানো, পাতা কেটে দেওয়া, দড়িতে ধরে হাঁটা। এ কাজে আমিও খুব আনন্দ পেতাম। একবার বড় এক খাসি কিনেছি। ধরিতে ধরে রাখতে পারি না। রাস্তায় নিয়ে গেলে, আমাকে মাটিতে টেনে একাকার। বাড়িতে এনে গাছের সাথে বেঁধে খুব পিটিয়েছি। ইচ্ছা মতো পিটিয়েছি। মা এসে রক্ষা করেছে। এ নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। ছাগল, ভেড়া দেখাশোনা করা খুব ধর্য্যরে কাজ। আমাদের নবি মোহাম্মদ (সা.) সহ বহু মহান ও মহৎ মানুষ এ ধর্য্যরে পরীক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করেছেন। বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমরা একাই গরু কোরবানির দেই। শুকরিয়া। সব সময় সামর্থ অনুযায়ি পশু ক্রয় করি। টাকা ধার করা, প্রতিবেশী বা কারও সাথে কোরবানি নিয়ে প্রতিযোগিতা কখনও করি না।
কোরবানির পশু নিজেই জবাই করা উত্তম। সামাজিক নিয়ম হিসাবে মসজিদের ইমাম সাহেবের জন্য সন্মানী সবাই দেয়, আমরাও দেই। তবে আমরা নিজের পশু নিজেই কোরবানি করি। গত বছর বাবা গরু জবাই করেছেন, তার পূর্বের বছর বড় ভাই, তার পূর্বে আমি জবাই করেছি। চলতি বছর আমার পালা।
নিজের পশু নিজেই কোরবানি করুন। সবাই ঈদের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক।
আবু সুফিয়ান রাসেল,সংবাদকর্মী