থোল্লার জমিদার মীর আশ্রাফ আলী

মমিনুল ইসলাম মোল্লা।।
কুমিল্লা থোল্লার জমিদার মীর আশরাফ আলী খানের বাসভবন ছিল বর্তমানে যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল-ফজলুল হক মুসলিম হল-ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল-এশিয়াটিক সোসাইটি। সেখানকার সমগ্র এলাকা নিয়ে ছিল কুমিল্লার মুরাদনগরের থোল্লার প্রভাবশালী জমিদার মীর আশরাফ আলী খানের (১৭৫৫-১৮২৯) ঢাকার বাসভবন। বৈবাহিক সূত্রে প্রাপ্ত তাঁর এই জমিদারি ছিল ত্রিপুরার বরদাখাত (মুরাদনগর-নবীনগর-বাঞ্ছারামপুর) পরগণায়। প্রজাহিতৈষী জমিদার মীর আশরাফ আলী খান ছিলেন ব্রিটিশের অনুগত ভক্ত। জমিদারির সদরদপ্তর থোল্লার পোশাকী নাম এখন বাখরনগর (আগা বাকেরের নামের অপভ্রংশ থেকে)। সম্রাট শাহ আলমের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র নবাব সৈয়দ করিম কুলি খানের বংশধর ছিলেন তিনি। তার আগে বাকের এ জমিদারি পেয়েছিলেন ঈসা খাঁর বংশধর কিশোরগঞ্জের হায়বত খানের মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার সুবাদে। শের শাহের আমলে (১৫৩৯-৪৫) পরগণার নাম দেওয়া হয়ে ছিল বলদাখাল। ১৯১০ সালের গেজেটে নাম হয় বরদাখাত।
আগা বাকেরের পুত্র আগা সাদেকের আমলে এই জমিদারির বিস্তৃতি ছিল বরদাখাত, গঙ্গামন্ডল, লৌহগড় ও পাটিকারা প্রভৃতি পরগণায়। আগা সাদেকের মৃত্যুর পর (১৭৩২) তিনপুত্র মির্জা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (মির্জা ভেলা), মির্জা আবুল হোসেন (আগা নবী) ও মির্জা মোহাম্মদ জাফর এই জমিদারি লাভ করেন। মির্জা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (মির্জা ভেলা) লাভ করেন বরদাখাত পরগণা। মির্জা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছিল তিন মেয়ে। তারা হলেন ১.আজিওন্নেছা খানম (স্বামী মীর আশরাফ আলী খান), ২. রওশন আরা খানম (স্বামী বিহারের পাটনার নবাবপুত্র মির্জা মোহাম্মদ বাকের), ৩. তৃতীয় কন্যা (নাম জানা যায়নি (স্বামী নারায়ণপুরের জমিদার দৌহিত্র কবি মির্জা হোসেন আলী)। মির্জা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর (১৭৬৩) এই তিন মেয়ে জমিদারি লাভ করেন।জমিদার মীর আশরাফ আলী খানের উত্তর পুুরুষ (প্রপৗত্র) নবাব সৈয়দ মোহাম্মদ আজাদ খান বাহাদুর (১৮৫০-১৯১৬) ছিলেন একজন উর্দু সাহিত্যিক ও সরকারি চাকরিজীবী। তিনি ছিলেন বঙ্গের রেজিস্ট্রেশন বিভাগের ইনস্পেক্টর জেনারেল। তিনি ফরিদপুরের নবাব খান বাহাদুর আব্দুল লতিফের (১৮২৮-৯৩) জামাতা।
ডা. হাসান সোহরাওয়ার্দী ছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুর হকের ভায়রা ভাই এবং কুমিল্লার থোল্লার জমিদার পীর আশরাফ আলী খানের অধস্তন পুরুষ নবাব সৈয়দ মোহম্মদ আজাদ খান বাহাদুরের কন্যা সেহর বানু বেগমের স্বামী। উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সোহরাওয়ার্দী মেয়েদের মধ্যে খ্যাতিমান ছিলেন বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দী। বিচাপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দীর সন্তান হচ্ছেন হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মকবুল-উল-নেছা বেগম অনেক কষ্টে সকল সন্তানদেরকে সুশিক্ষত করেন। উবায়দুল্লাহ আল উবায়দী সোহরাওয়ার্দী ও মকবুল-উল-নেছা বেগম দম্পতির সন্তানদের সকলেই ছিলেন প্রতিভাবান, আলোকিত মানুষ ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আবদুল্লাহ আল মামুন আল সোহরাওয়ার্দী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। স্কুল কলেজজীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি বৃত্তি পেতেন ্এবং পুরুস্কার অর্জন করতেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আরবি, ইংরেজি ও দর্শনে অনার্সসহ ১৮৯৮ সালে প্রথম শেনীতে প্রথম হয়ে বিএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিক্ষা নিয়ে আরবিতে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে তিনি এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ইসলামী আইন নিয়ে প্রথম গবেষণা করে ১৯০৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী দুজন ছাত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি তার বাবার মতোই জ্ঞানানুসন্ধিৎসু ছিলেন। তিনি লন্ডনের গ্রেস’জ ইন থেকে ব্যারিস্টার হন। একই সাথে তিনি লন্ডন বিশ^বিদ্যালয় থেকে আরও একটি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ফ্রান্স, জার্মানিক, অস্ট্রিয়া, কনস্টান্টিনোপল ও কায়রোতে অধ্যয়ন করেন। কলকাতার টালিগঞ্জের অভিজাত পরিবারের সদস্য সাহেবজাদা মির্জা মোহাম্মদ আলী নকীর কন্যা (একমাত্র সন্তান) সাজেবজাদী আহমেদী বেগমের সাথে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির কোনো সন্তান ছিল না।
ড. আবদুল্লাহ আল মামুন আল সোহরাওয়ার্দী সংকলিত ও অনুদিত বিখ্যাত পুস্তকটির প্রতি লিও টলস্টয়ের ভালোবাসার কথা সাধারণ পাঠকের গোচরে আসার ফলে দ্য সিয়িংস আব মুহাম্মদ নিয়ে প্রথম প্রকাশের দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে পাঠকহৃদয়য়ে নতুন ভাবে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দিপনার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮) ড. আবদুল্লাহ আল মামুন আল সোহরাওয়ার্দী সংকলিত অনুদিত বিখ্যাত পুস্তকটি সে সময়ে পাঠ করেছিলেন।
