বরুড়ায় আ.লীগের ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মার্কেট দখল!
স্টাফ রিপোর্টার ।।
বরুড়ায় ছয়টি দোকান বিশিষ্ট একটি মার্কেট দখল করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হওয়া এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের ভাউকসার বাজারে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রবিউল আলম পাশের গালিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, ঘটনার সময় রবিউল বারবার বলেছেন- তিনি কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুলের নির্দেশে সেখানে গেছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকেলে এমপি নজরুল দাবি করেছেন- রবিউল তাঁর অনুসারী হলেও তিনি তাকে এমন কোন নির্দেশনা দেননি। রবিউল তাঁর নাম ভাঙিয়ে একটি পক্ষের হয়ে মার্কেট দখল করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
গত ২২ আগস্ট দখল হওয়া ওই মার্কেটের সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় দু’টি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলমান রয়েছে আদালতে। মার্কেটের মালিক ভুক্তভোগী আবুল কাশেম ভাউকসার গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। কাশেমের সঙ্গে প্রতিপক্ষ ভাউকসার বাজার এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের ও তার ভাই আবদুর রশিদের ওই মার্কেটের মালিকানা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের।
এদিকে এ ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউলকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আবুল কাশেম। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৪০/১৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা হলেন- আবু তাহের, আবদুর রশিদ, রশিদের ছেলে সোহাগ, ভাউকসার গ্রামের বাবর মিয়া, বকুল খান ও হিরন মিয়া।
রোববার বিকেলে ভুক্তভোগী আবুল কাশেম বলেন, ভাউকসার পশ্চিম বাজারের পয়ালগাছা সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত ৯ শতক জায়গার উপর নির্মিত ওই মার্কেটের মালিকানা নিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে মামলা চলছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। গত ২২ আগস্ট সকালে দেড় শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মার্কেটটি দখল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল। সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ীদের দোকান থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ঘটনার সময় ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ আসে ৩ ঘণ্টা পর। থানা পুলিশও রবিউলের কথায় চলে। রবিউল মোটা অংকের টাকায় ভাড়াটে হিসেবে এই কাজ করেছেন। এ ঘটনায় মামলা করলেও পুলিশের কোন তৎপরতা দেখছি না।
তিনি বলেন, পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ওই সম্পত্তির সিএস ও আরএস খতিয়ান আমাদের নামে। আবু তাহের ও আবদুর রশিদ ভুয়া দলিল করে জমির মালিকানা দাবি করেছেন। তিনি বিএস রেকর্ডের সময় জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে জমিটি রেকর্ড করান। পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনার তিন মাস পরেই আদালতে মামলা করেছি ওই বিএস রেকর্ড বাতিলের জন্য। জায়গাটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ১৩টি মামলা চলছে বর্তমানে।
শাহ আলম নামে ওই মার্কেটের একটি দোকানের ব্যবসায়ী বলেন, চেয়ারম্যান বরিউলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে বের করে দিয়ে দোকানে থাকা মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। ঘটনার সময় রবিউল বারবার বলতে থাকেন- এমপি সাহেবের নির্দেশে এখানে এসেছি, কেউ কোন কথা বললে খবর আছে।
বাজার পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ জাফর আহমেদ বলেন, রবিউলের নেতৃত্বে দেড় থেকে দুই’শ জন দলখের সময় বাজারে আসে অস্ত্র হাতে। তারা প্রথমে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এখন আমাদের প্রশ্ন তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কীভাবে আদালতের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এমপি সাহেবের নির্দেশে এই দখল করেছেন বলে তিনি সকলকে বলেছেন।
জাফর আহমেদ আরও বলেন, এ ঘটনার পর বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। রবিউল সন্ত্রাসীদের নিয়ে হঠাৎই হামলা করেছে, আমরা আগে জানতে অব্যশই বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতাম। ঘটনার পর বাজার কমিটি দুইপক্ষকে বলেছে- তাদের মালিকানা দাবির সপক্ষে দলিলপত্র দিতে। আবুল কাশেম আমাদেরকে সকল কাগজপত্র দিলেও এখনো জমা দেননি আবু তাহের পক্ষ।
অভিযুক্ত আবু তাহের বলেন, গত ৩৫ বছর ধরে ওই সম্পত্তি আমার দখলে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তারা জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে সম্পত্তি দখল করে নেয়। গত ২২ আগস্ট আমরা মার্কেটের মালিকানা বুঝে নিয়েছি। চেয়ারম্যান রবিউল ঘটনার সময় বাজারে ছিলেন। আমরা কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করিনি।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হোসেন বলেন, মার্কেটের প্রকৃত মালিককে তাঁর সম্পত্তি উদ্ধার করে দিয়েছি, আমি কোন মার্কেট দখল করিনি। আর আমি কোথাও এমপি সাহেবের নাম বলিনি এবং লুটপাট করিনি।
আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকাকালে এভাবে মার্কেট দখল বা উদ্ধার করা পাশের ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি হয়ে পারেন কি-না, জানতে চাইলে রবিউল হোসেন বলেন, অবশ্যই পারি। রাজনৈতিক বিবেচনায় এটা আমাদের দায়িত্ব।
বরুড়া থানার এসআই নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশে আমি গত বৃহস্পতিবার থেকে মামলাটির তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষ হলে আদালতে সঠিক প্রতিবেদন জমা দেবো।
রোববার বিকেলে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল বলেন, রবিউল আমার লোক, এটা সত্য। তবে আমি তাকে এমন কোন নির্দেশ দেইনি। সে সম্ভবত অপর পক্ষের থেকে সুবিধা পেয়ে দলবল নিয়ে গিয়ে মার্কেটি দখল করে দিয়েছে। আমি শনিবার এলাকার একটি অনুষ্ঠানে রবিউলকে পেয়ে ব্যাপকভাবে শাসিয়েছি বিষয়টি নিয়ে। এখন যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে, বাকিটা পুলিশের তদন্তের পর আদালত দেখবে।