বাংলাদেশে গণতন্ত্র : সোনার পাথর বাটি
।। মোঃ মেহেদী হাসান ।।
১. বাংলাদেশে মানুষ বেশি, সম্পদ কম — এ কারণে এখানে একনায়কতন্ত্র-ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অলিগার্ক বেশিদিন চলে না । ১৯৪৭ সালের পর আইয়ুবের স্বৈরশাসন দশ বছরের বেশি সময় ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি, স্বাধীনতার পর দু দুটি সামরিক শাসনের কোনোটিই বেশি সময় ধরে চলে নি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ নিজকে এর আগে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দলগুলোর যুদ্ধ অপরাধীদের সে সময়ে কোনো বিচার না করে শুধু নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একাংশের মাধ্যমে গড়ে ওঠে জাসদ। জাসদকে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী দিয়ে দমন করা হয়। কিন্তু একদলীয় বাকশাল হিসেবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে ব্যর্থ হয়। সামরিক বাহিনীর মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের অভ্যুত্থানের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। দেশে রাজনৈতিক দলের একটা শূন্যতা দেখা দেয়। জিয়াউর রহমান এ শূন্যতা পূরণ করেন বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করে। ক্ষমতায় থেকে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে সক্ষম হন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতায় থেকে আর কেউ কার্যকর রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন নি। এরশাদ নয় বছর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল গঠন অনেক কঠিন উত্তর ঔপনিবেশিক বাস্তবতায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ পরমতের প্রতি সহিষ্ণুতা, নিজের দলে গণতন্ত্রের চর্চা দুর্লভ হওয়ায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ খুব একটা সম্ভাবনাময় বলা যায় না।
২. বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে পশ্চিম পাকিস্তানের পাচার — বক্তব্যকে সামনে এনে আওয়ামী লীগ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনকে হটিয়ে দেয়। পেছনে তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাংলা ভাষা — এসব বিষয় বয়ান আকারে উপস্থাপিত হয়। এর বিপরীতে বাংলাদেশের পাকিস্তানবাদীরা এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে প্রধান করে তোলে বয়ান হিসেবে। দুটো বয়ানের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী বয়ান জনসাধারণকে যে আকৃষ্ট করে — তার কারণ অর্থনৈতিক । যে বক্তব্যগুলো সেসময় সামনে নিয়ে আসা হয় তার মধ্যে পূর্ব বাংলার সম্পদ পাচার হচ্ছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি, পূর্ব পাকিস্তানের পাচার করা অর্থে গড়ে উঠছে— এ বয়ান খুব জনপ্রিয়তা পায়। এটাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি গড়ে দেয় । সে সময় রেডিও পাকিস্তানের একটি সংবাদ উল্লেখ করা যায়। পাকিস্তান সরকারের তরফে দুই পাকিস্তানের অর্থনীতি একসাথে উন্নয়নের গতি পেয়েছে এটা বোঝাতে রেডিও পাকিস্তানের একটি সংবাদ শেয়ার করা যেতে পারে। সংবাদটি এমন: পশ্চিম পাকিস্তানে ইসলামাবাদ নামে নতুন শহর গড়ে উঠছে পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে, আর ঢাকায় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি শাখা গড়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি শাখা ভবনের সঙ্গে আস্ত রাজধানী গড়ে ওঠার তুলনা কতটা হাস্যকর উন্নয়নের সেকালের বয়ান —একটা নমুনা মাত্র। বাংলাদেশ হবার পর স্বাভাবিকভাবেই শাসক শ্রেণীর কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সম্পদ পাচার বন্ধ হবে দেশের সদ্যপ্রাপ্ত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থাকবে কিন্তু বাস্তবতা তার থেকে ছিল অনেক দূরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ৭৫ এ পর্বে সম্পদ লুণ্ঠন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তা অনিয়ন্ত্রিত ছিল। যুদ্ধের পর দেশের পুনর্গঠন এর জায়গায় একটি বিশৃঙ্খল লুণ্ঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। একটি উঠতি লুটেরা মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রাইভেট সিলিংয়ের নীতি ছিল পরস্পর বিরোধী। এই বিকাশ সমান বিকাশমান পুঁজিপতি শ্রেণীর জন্য অন্তরায় হয়ে উঠেছিল সরকারের সেকালের নীতি। ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁর হত্যাকাণ্ড ঘটে । ৭৩-এর নির্বাচনটা আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সে নির্বাচন ছিল একটি টেস্ট কেস। প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনত্তীর্ণ হয়। ভেনাম ভ্যান স্যান্ডেল বলছেন: “নির্বাচনে একতরফা বিজয় লাভের লক্ষ্যে অপহরণ, নিগ্রহ, জালভোট এবং ব্যালট বাক্স চুরির মতো অপকর্মে লিপ্ত হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের এসব কর্মকান্ড নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।আওয়ামী লীগ যখন ঘোষণা করে নির্বাচনে তারা সাতানব্বই ভাগ আসন/ ভোট পাওয়ার কথা, তখনই প্রমাণিত হয় নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিয়ম ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার পুরনো বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি স্বাধীনতা লাভের পরেও। ” ৭৩ সালের নির্বাচনের আগে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, দেশে বিরোধী দল না থাকলেও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দল দরকার এবং সেই জন্য ১০০টা আসনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী না দিক। পরবর্তীকালে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক আহমদ ছফাকে বলেন, ইতিহাস শেখ মুজিব রে স্টেটমেন্ট এর একটা সুযোগ দিয়েছিল শেখ মুজিব সুযোগখান কামে লাগাবার পারলেন না। সংসদীয় গণতন্ত্র বিষয়ে তাজ উদ্দিনের সঙ্গেও শেখ মুজিবুর রহমানের দারুণ মতভেদ ঘটে। মন্ত্রিসভা থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন তাজ উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে একদলীয় বাকশাল সরকার কায়েম করেন । তাজউদ্দীন তখন বলেছিলেন, যে সরকারকে জনগণ সরাতে না পারে ভোটের মাধ্যমে। সে সরকারকে বন্দুকের গুলির মাধ্যমে সরতে হয়। পরবর্তীতে আমরা তাজ উদ্দিনের ভবিষ্যৎবাণীকেই বাস্তবায়িত হতে দেখি।
৩. বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রধান ব্যাখ্যাকারীদের একজন আনিসুজ্জামান তাঁর একাধিক লেখায় বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁর দৃঢ় ধারণা ছিল সামরিক শাসন স্থায়ীভাবে বিদায় নেবে। তিনি তার ভারতীয় বন্ধুদেরকে গর্ব করে কথাটা বলতেন। পরে অল্প সময়ের ব্যবধানে সামরিক শাসন ফিরে এলে তিনি একাধিক লেখায় এ বিষয়ে তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেন। কিন্তু কেন সামরিক শাসন ফিরে এলো গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হলো না দেশে, তার কারণ তাঁর কোন লেখায় আমি পাইনি । এটা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একটা শোচনীয় ব্যর্থতা যে, কোনো সরকারের ব্যর্থতার / পতনের মূল্যায়ন হলে যে শিক্ষনীয় উপাদান আমরা পেতাম বুদ্ধিজীবীগণ তার থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। আমরা যেভাবে রাজনীতিবিদদেরকে তাদের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করি আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ব্যর্থতা নিয়ে আমাদের সেরকম মাথা ব্যথা নেই । জিয়াউর রহমানের শাসনকালে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বাকশাল বিলুপ্ত হয় । বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু হয়। আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয় জোহরা তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে। জিয়াউর রহমানের শাসনকাল দীর্ঘ স্থায়ী হয়নি। সামরিক বাহিনীর একটি গ্রুপের হাতে তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে। আওয়ামী লীগের শাসনকালে নির্মম নির্যাতনের শিকার জাসদও খুব বেশি দূর আর এগোতে পারেনি।
৪. বঙ্গবন্ধুর হাতে অবলুপ্ত আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় ফিরে আসে সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায়। আমি প্রথমেই বলেছি খুব সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশ ছাড়া জনবহুল দেশে একনায়তন্ত্র বা ফ্যাসিবাদ দীর্ঘস্থায়ী হয় না । তাই এরশাদের সামরিক শাসনও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কোন কারণ ছিল না। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ তিন জোটের অঙ্গীকার থেকে সরে আসে। এরশাদের অধীনে সে বছর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না গেলে এরশাদের প্রথম পতন আরো ত্বরান্বিত হতো । সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কারণে এরশাদ তাঁর ক্ষমতাকে আরো চার বছর স্থায়ী করতে সক্ষম হন । ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মানুষ আবার গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিজয়ী হয় এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে । সে আন্দোলনে মূলত নেতৃত্ব দেয় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি , আরো স্পষ্ট করে বললে, প্রধানত ছাত্ররা । ১৯৯০-এর গণ-আন্দোলনের সুফল আওয়ামী লীগ ভোগ করতে পারে নি এরশাদের সঙ্গে আঁতাতের কারণে। শিক্ষিত মধ্যবিত্তের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে এদেশের মানুষ বিএনপিকে নির্বাচিত করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শাহাবুদ্দিনের এই নির্বাচন সবচেয়ে নির্ভুল এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছিল। কিন্তু পরাজয়কে আওয়ামী লীগ মানসিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। তাই বিএনপি সরকারকে পরবর্তী পাঁচ বছর ব্যস্ত থাকতে হয়েছে আওয়ামী লীগের আন্দোলন দমাতে। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমেই নির্বাচনের দাবি আদায় করে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তা ছেড়ে যাওয়ার ভীতি দুটো রাজনৈতিক দলকে কম-বেশি আতঙ্কিত করেছে। ফলে বিএনপি বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধি করেছে আর আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই তুলে দেয়। গঠনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে। এটা বাংলাদেশের জন্য সুখবর কোন বিষয় নয়। এই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ তার ১৫ বছর ব্যাপী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েমের সূচনা করে। কারণ আমরা আগেই বলেছি, দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশ সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব । কারণ দল গুলোর মধ্যে কোন গণতান্ত্রিক মনোভাব নেই। আমরা অতীতে দেখেছি ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত একটি নির্বাচনেও বিরোধীদল বিজয়ী হতে পারেনি। এটা থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সুশাসনের অভাব এত কম যে ক্ষমতায় থেকে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে অসমর্থ।
৫. বাংলাদেশে সরকারগুলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বিব্রত থাকতে হয় । বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে তারুণ্যের শক্তি আমরা দেখি পরবর্তী সময় গবেষণায়ও পাওয়া যায় ভাষা আন্দোলনের ৭০% অংশগ্রহণকারী তরুণ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও তার প্রতিফলন দেখা যায় । ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে প্রধান চালিকা শক্তি ছিলো শহরের শিক্ষিত তরুণ তথা ছাত্র সমাজ। গত ১৫-১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনের নিষ্ঠুর নির্যাতনের কারণে দলীয় রাজনৈতিক পরিচয়ের মধ্য দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না । দেশে গুম-খুন-বিচার বহির্ভূত হত্যা-মামলা-হামলা ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছিল । ফ্যাসিবাদ গোটা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, জঙ্গি-বিএনপি- জামাত জাতীয় ট্যাগ লাগিয়ে বিভক্ত করে ফেলে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, বাংলাদেশের এক তরুণ কবি সে সময়ে একটা কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম দেন ‘কায়দা করে বেঁচে থাকো’। এরকম পরিস্থিতিতে খুব স্বাভাবিকভাবে বিকল্প সন্ধান মানুষের জন্য জরুরি ছিল। সে বিকল্প ছিল ছাত্ররা। এ ছাত্ররা কোন দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় নয় কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের ফল ও নয় কখনো ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিবর্তন, কখনো সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের মত নির্দোষ আন্দোলন গড়ে তুলে ফ্যাসিবাদকে দেশছাড়া করে। আদতে সরকার ১৫-১৬ বছরের মধ্যে অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে। বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করে, ব্যাংকগুলো নিঃশেষ করে দিয়ে, কাগজের মুদ্রা ছাপিয়ে আর বেশিদিন চালানো সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আমলে অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম বলেছিলেন যখন কোন দেশে মুদ্রাস্ফীতি দুই অঙ্কের বেশি হয় তখন আমরা বলি সে দেশের সরকারের পতন আসন্ন। বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়ার কোন উপায় ছিল না। সরকারি ভাষ্যে মুদ্রাস্ফীতি সাড়ে নয় দেখানো হলেও আমাদের ধারণা প্রকৃত মুদ্রা স্মৃতি ছিল ১৪ এর উপরে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় ফ্যাসিবাদী শাসন আর টেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয় বারের মতো প্রায় বিলুপ্ত করে দলটির প্রধান ভারতে পালিয়ে যান।
৬. বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুব আনন্দদায়ক কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না। আমার ধারণা এদেশের সাধারণ মানুষকে আগামী দিনগুলোতেও এভাবে একের পর এক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে যেতে হবে — একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের জন্য। আমরা সেদিনের অপেক্ষায় আছি। আপাতত জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যটাই আমার মনের কথা: জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সমঝোতা অর্জনের জন্য সংঘটিত অপরাধ ও ভুলগুলোর জন্য “দুঃখিত” ও “ক্ষমা প্রার্থনা” শব্দ দুটি আমাদের শোনা দরকার। আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি এটা এখানে শুনিনি।’
লেখক:উপাধ্যক্ষ,কিশোরগঞ্জ গুরু দয়াল সরকারি কলেজ।