সেবা গ্রহণ ও প্রদান ; আমাদের বাস্তবতা

।। প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বী।।
সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহণ ও সেবা প্রদান নিয়ে সর্বত্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেবা প্রদান কার্যক্রমকে সহজতর করতে প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুত, পাসপোর্ট, পৌরসভা, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রেশন অফিস, পুলিশসহ সকল সার্ভিস সেক্টর সমুহে এই নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু কোথায় যেন অভিযোগগুলির সমাধান আটকে আছে। এই সুযোগে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ ও প্রদানের একটি খারাপ সংস্কৃতি চালু হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারীর আন্তরিকতা থাকলেও বিদ্যমান আইন-কানুনের মারপ্যাঁচে সেবাগ্রহণকারীকে যথাযথ সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না । সেবা গ্রহণকারী তার সেবা না পেয়ে বিরক্ত হন। সেবা প্রদানের ম্যানুয়েলকে প্রতিনিয়ত যুগোপযুগী হয় না। সেবা গ্রহণকারীর আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তিনিও মনে করে থাকেন, সেবা প্রদানকারী তাকে হয়রানি করছেন। সেবা প্রদানকারীকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য সেবা প্রার্থীদের সেবা প্রদান করতে হয়, সেক্ষেত্রে তার পক্ষে সবার প্রতি সমান আচরণ করা সম্ভব হয় না। মোবাইল ফোন কোম্পানির মত অসংখ্য সার্ভিস পয়েন্ট থাকায় তাদের পক্ষে অন্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তুলনামুলক সহজে সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশের মত দেশে সম্পদ সীমিত হওয়ায় এই সমস্যাটি প্রকট। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় সাপ্লাই চেইনের সর্বত্র চাপ অনুভুত হয় । সমাধানের উপায় প্রতিনিয়ত সেবা ম্যানুয়েল-কে আধুনিক করতে হবে, সার্ভিস ডেলেভারি পয়েন্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যেমন ওয়ার্ড পর্যায়ে ভূমি অফিস হলে, ভূমির সার্ভিস পয়েন্ট পয়েন্ট বৃদ্ধি পাবে ভোগান্তি কমতে পারে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়া সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। একটি সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে ৪/৫ টি ধাপ ও তারও অধিক ধাপে সার্ভিস অনুমোদন হয়ে থাকে। যা, দীর্ঘসূত্রিতাকে সহায়তা করে।
সকল সংস্থায় অদ্য কতটি অভিযোগ/ আবেদন পড়েছে ,তা ডেসবোর্ড থাকলে, তার বিপরীতে সমাধানকৃত আবেদন ও ক্রমপুঞ্জিভুত আবেদন সংখ্যা দৃশ্যমান হলে সেবা প্রদান ও গ্রহণের বিষয়গুলি সকল অংশীজনগণ অবহিত থাকবেন। একই ধরনের সেবায় একাধিক প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি রাখা হলেও হলেও সেবার মান বাড়াতে নিজেদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। সেবা প্রদানকারীর কাজের পরিমাণকে যুক্তিযুক্ত ভাবে কমাতে হবে, অনেক ক্ষেত্রে তাকে আইনগত প্রটেকশনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলি নাগরিক সেবার সাথে সংস্থা টু সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহণকারী আমাদের সমাজের অংশ ; সকলের সহনশীলতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতায় সেবা প্রদান ও গ্রহণের সংস্কৃতি আরো সেবা বান্ধব, দুনীতিমুক্ত ও হয়রানি মুক্ত হবে আশা করি।

inside post

লেখক- সাবেক সম্মানী সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ

( আইইবি), কুমিল্লা।

আরো পড়ুন