২৪ জুলাই: এক গণজাগরণের ইতিহাস

 হাসিবুল ইসলাম সজিব।।
২৪ জুলাই, ২০২৪—বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। এই দিন হাজারো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিল অন্যায়, দমন-পীড়ন ও ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ৩৬ দিনের টানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠা করে এক গৌরবময় উদাহরণ।
আন্দোলনের সূচনা ঘটে ১১ জুলাই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটবাড়ি বিশ্বরোডে মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাদের উপর হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে ১২ জুলাই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করলে ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত নেতাকর্মীরা ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হোসেনের উপর বর্বর হামলা চালায়। নজরুল হলে তাকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নির্যাতন করা হয়।
আহত তামিমকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিতে বাধা দেয় হামলাকারীরা। পরবর্তীতে সাংবাদিক আবু সুফিয়ান রাসেল এবং আবদুল্লাহ আল মারুফের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ডিসি অফিসে স্মারকলিপি জমা দিতে গেলে আমি নিজে ছাত্রলীগের কর্মী হাবিব গাজীর হুমকির মুখে পড়ি, কারণ আমি হামলার খবর প্রচার করেছিলাম।
এক পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সংযোগ, রাজপথে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আলেখারচর বিশ্বরোডে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখি ছাত্রদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার হচ্ছে । সেই সময় পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে মোটরসাইকেল না থাকায় সিএনজি অটোরিকশা  যোগে এলাকা ত্যাগ করতে হয়।
৪ আগস্ট কুমিল্লা নগরীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে আবারও হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে মার খায় বহু শিক্ষার্থী, এমনকি মেয়েরাও। একপর্যায়ে ছাত্রীরা এক বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তার জন্য আর্তনাদ করলেও কেউ সাহস করে দরজা খোলেননি।
তবে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে থাকেনি আন্দোলন। ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ‘একদফা এক দাবি’ নিয়ে শিক্ষার্থীদের লংমার্চ। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের ঐক্য, সাহসিকতা ও দেশপ্রেম জাতিকে অনুপ্রাণিত করে।
এই ৩৬ দিনে প্রত্যেকে হারিয়েছিল নিরাপত্তা, বিশ্বাস এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার। সেই হারানোর বেদনার ওপর দাঁড়িয়েই তারা ছিনিয়ে এনেছে বিজয়।
২৪ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা আন্দোলন শুধু একটি দাবির নয়, এটি ছিল এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে জাগ্রত তরুণ প্রজন্মের জাগরণ।
এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে দেশের শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না, এবং তারা কখনও ন্যায় বিচারের প্রশ্নে আপস করতে রাজি নয়। এই ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।
inside post
লেখক: সংবাদকর্মী।
আরো পড়ুন