বিচিত্র জীবন
পাকিস্তানের চিরায়ত জীবনধারার সঙ্গে তাদের কোনো মিলই নেই। সংস্কৃতি-সৌন্দর্যে তারা একেবারেই পৃথক। অতুলনীয় সুন্দর এ সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও জীবানাচারও তেমতি স্বতন্ত্র।
বলছিলাম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া রাজ্যের হিন্দুকুশ পর্বতের কোলে বসবাসকারী কালাশ জনগোষ্ঠীর কথা।
উইকিপিডিয়ায় এদেরকে কালাশা বা কালাশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা দার্দীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তারা কালাশা ভাষায় কথা বলে যা ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর দার্দীয় পরিবারের অন্তর্গত। এদেরকে পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অনন্য ধরা হয়।
কালাশ গোষ্ঠীদের অবাধ যৌনতা, নাচের মধ্য দিয়ে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং যে কোন সময় নারীদের তার নতুন মনের মানুষের কাছে চলে যেতে পারার এ সংস্কৃতি ঠিক যেন পাকিস্তানের চলমান ধারার একেবারেই উল্টো এক ধারা। যেন এক পাকিস্তানের ভেতর আরেক পাকিস্তান।
তবে ক্ষুদ্র এই গোষ্ঠী বর্তমানে খুবই আতংকে দিন পার করছে। তরুণ সম্প্রদায় ব্যাপক হারে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছে বলে তাদের আশংকা এ সংস্কৃতি বেশিদিন টিকে থাকবে না।
কালাশ গোষ্ঠী ২০০৮ সাল থেকে ইউনেস্কোর কালচারাল হেরিটেইজে তালিকাভুক্তির চেষ্টা করে আসলেও এখনো সফল হতে পারেনি। এজন্য তারা আমলাতন্ত্রকে দায়ী করছে। কালাশ সম্প্রদায়ের লোকজনের ত্বক ফর্সা, চোখের রঙ হালকা। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, তারা কোন এক সময় প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা ছিলেন। অথবা তারা হয়তো আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর সেনা বাহিনী থেকে এসেছে। আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্বাব্দ চতুর্থ শতকে এই এলাকা দখল করেছিলেন।
কয়েক শতাব্দী আগে কালাশ গোষ্ঠী চিত্রল এলাকা শাসন করলেও বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ হাজারে। কালাশ পিপলস ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (কেপিডিএন) এ কথা জানিয়ে বলেছে, তাদের ঐতিহ্য আজ হুমকির মুখে।
কালাশদের সংস্কৃতির চমকপ্রদ একটি বিষয় ‘বাসালি’। প্রত্যেক গ্রামে এক রকম একটি বাসালি রয়েছে। যেখানে ঋতুমতী নারী তার রজঃকালীন সময়ে এই ঘরে অবস্থান করে। এসময় তাকে অপবিত্র বিবেচনা করা হয় এবং সে কাউকে স্পর্শ করতে পারে না। তাই আলাদা করে তাকে বাসালিতে রাখা হয়। এই ঘরে বসেই সে বইপড়া কিংবা সেলাইয়ের কাজ করে। ঘরের দরজায় তাকে খাবার এনে দিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া কারও মৃত্যুতে শোক পালন করে না কালাশ গোষ্ঠী। বরং মৃত্যুকে তারা জীবনপ্রবাহের সমাপ্তি হিসেবে গণ্য করে। এসময় তারা নাচ, গান ও ভোজ উৎসবের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকে উদযাপিত করে।
বিয়ের সংস্কৃতিও কালাশদের ভিন্নরকম। বরের বাবা মায়ের বাড়িরে সামনে নাচ গানের মধ্যদিয়ে বিয়ের বিষয়ে উভয়ে সম্মত হয়। পরে কনের বাবার বাড়িতে ফিরে আসার মধ্যদিয়ে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। কালাশ সংস্কৃতিতে স্বামীকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ের অধিকার নারীর রয়েছে। তবে তার নতুন প্রেমিককে অবশ্যই কনে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়।