করোনা ছুটিতে মাদরাসায় রমরমা মাদক ব্যবসা, নৈশপ্রহরী গ্রেফতার
আমোদ রিপোর্টার
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের শাহাপুর ফাজিল মাদরাসার নৈশপ্রহরী ওমর ফারুকের মাদক ব্যবসা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও। তারা অভিযুক্ত ওমর ফারুককে স্থায়ী ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, অভিযুক্ত ওমর ফারুক শাহাপুর গ্রামের মৃত নূর হোসেনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরির অন্তরালে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। করোনাকালে মাদরাসার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তিনি মাদরাসার আঙ্গিনাকে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে রূপান্তর করেছেন। প্রতিদিন রাতেই মাদরাসার আঙ্গিনা এবং ছাদে মাদকসেবীদের আড্ডা জমাতেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের পরোক্ষ সমর্থন থাকায় ওমর ফারুকের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে ভয় পেতেন স্থানীয় জনসাধারণ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৮ জুলাই দুপুর ২টার দিকে শাহাপুর গ্রামে অভিযান চালায় কুমিল্লার ডিবি পুলিশ। এসময় ইয়াবা বিক্রয়কালে শাহাপুর ফাজিল মাদরাসার মেইন গেইটের সামনে থেকে ১০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন নৈশপ্রহরী ওমর ফারুক। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। কুমিল্লার ডিবি পুলিশের এসআই মোঃ সাইদুর রহমান বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে মাদক ব্যবসার দায়ে শাহাপুর ফাজিল মাদরাসার নৈশপ্রহরী ওমর ফারুকের গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে মাদরাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা হলে তারা জানান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরির অন্তরালে মাদক ব্যবসার মত জঘন্য কাজে লিপ্ত থেকে অভিযুক্ত ওমর ফারুক মাদরাসার পবিত্র পরিবেশকে অপবিত্র করার অপচেষ্টা করেছেন। তারা দ্রুত ওমর ফারুককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ বিষয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, মাদকসহ ওমর ফারুকের গ্রেপ্তারের খবর শুনেছি। এর আগেও সে অপর একটি মামলায় মাসখানেক জেল খেটেছে। করোনার কারণে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। প্রতিষ্ঠান খোলা হলে আমরা বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মাদরাসা বন্ধ থাকার কারণে ওমর ফারুকের বিষয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। মাদরাসা খোলা হলে আমরা গভর্নিং বডির মিটিং ডেকে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি এসএম শেখ কামাল বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। পক্ষান্তরে ‘মাদক’ হচ্ছে জাতি ধ্বংসের হাতিয়ার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারী মাদক ব্যবসার মত জঘন্য কাজে জড়িত থাকা সত্যিই দুঃখজনক। উপজেলা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা তার উপযুক্ত শাস্তি এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি কামনা করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, শাহাপুর ফাজিল মাদরাসার নৈশপ্রহরী ওমর ফারুকের গ্রেপ্তারের বিষয়টি শুনেছি। মাদরাসার কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে সুপারিশ করবো।
মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে। তাকে কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।